ঢাকা রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫

উত্তপ্ত মণিপুরে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ০১:১০ পিএম
মণিপুরে সহিংসতা। ছবি- সংগৃহীত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। রাজ্যের কুখ্যাত চরমপন্থি সংগঠন ‘আরমবাই তেঙ্গোল’ এর কথিত ‘আর্মি চিফ’ কানন মেইতেইকে গ্রেফতারের পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

এরই জের ধরে রাজ্য সরকার বিষ্ণুপুর, ইম্ফাল ইস্ট, ইম্ফাল ওয়েস্ট, থৌবল ও কাকচিং - এই পাঁচটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করেছে। একইসঙ্গে সাতটি জেলায় ইন্টারনেট ও মোবাইল ডেটা সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শনিবার রাতে ইম্ফাল ওয়েস্ট এলাকায় এনআইএ ও রাজ্য পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হন চরমপন্থি নেতা কানন মেইতেই। 

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে পড়ে, পুলিশের গাড়িবহর থামিয়ে গ্রেফতার হওয়া নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গুলি চালায়।

অন্যদিকে, জিরিবাম জেলার বরাক নদী থেকে আট মাসের শিশুসহ ছয়জনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো রাজ্য। নিহত ব্যক্তিরা কুকি বিদ্রোহীদের হাতে অপহৃত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ইম্ফালে শুরু হয় বিক্ষোভ। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টাও করে একদল বিক্ষোভকারী।

রাজ্যের নাগরিক সমাজের সংগঠন ‘কোকোমি’ মুখপাত্র খুরাইজাম অথোবা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মণিপুরের সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার যদি জনগণের সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত না নেয়, তার ফল ভুগতে হবে। আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি, সরকার যেন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায়।’

বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য ছিলেন রাজ্য মন্ত্রী ও বিজেপি বিধায়ক আরকে ইমো সিংহ। তার বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইরকম হামলা হয় আরও দুই মন্ত্রী ইয় কেমচন্দ ও এল সুসিন্দ্রো সিংহের বাড়িতেও। 

এছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী সপাম রঞ্জনের বাসভবন ঘিরে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। পরে তিনি আশ্বাস দেন, সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না এলে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন।

অন্যদিকে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে চারজন বা ততোধিক মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ। সঙ্গে বহনযোগ্য যেকোনো ধরনের অস্ত্র, লাঠি বা পাথর বহনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মে মাসে রাজ্যে কুকি-জো ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন।

 চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। তবুও সংঘাত থামেনি। বরং সম্প্রদায়গুলোর মধ্যকার বিভাজন ও অবিশ্বাস ক্রমেই গভীর হয়ে উঠছে।