ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

মালদ্বীপ ঘেঁষে সামরিক ঘাঁটি বানাচ্ছে ভারত

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
বিত্রা দ্বীপে সামরিক সরঞ্জাম নামানো হচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত

এবার নিজেদের সম্প্রসারণ নীতির প্রয়োগ ঘটাতে যাচ্ছে ভারত। সামরিক ঘাঁটি গড়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত শক্তি বাড়াতে চাইছে নয়াদিল্লি। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ৩৬টি দ্বীপপুঞ্জের একটি এই ঘাঁটি তৈরি করা হবে। এ জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিত্রা দ্বীপ অধিগ্রহণের। ইতোমধ্যে বিত্রা দ্বীপে জারি হয়েছে এই বিষয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি।

শনিবার (১৯ জুলাই) টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরের পরে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দক্ষিণ ভারতের প্রান্তে কেরালার উপকূলের ৩৬ দ্বীপপুঞ্জ। এর মধ্যে মাত্র ১০টি দ্বীপ মানুষের বসবাসের যোগ্য। দ্বীপটির নাম বিত্রা।

সেখানে একটি সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত ও কূটনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। দ্বীপটির অবস্থান ও জাতীয় নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজস্ব বিভাগ গত ১১ জুলাই এই সংক্রান্ত একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

বিত্রায় বর্তমানে মাত্র ১০৫টি পরিবার বসবাস করে। ছোট এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৯১ হাজার ৭০০ বর্গমিটার (অর্থাৎ ০.০৯১ বর্গ কিলোমিটার)। দ্বীপটির জনসংখ্যা প্রায় ৩৫০ জন। তারা সকলেই মাছ ধরা ও নারিকেল চাষের ওপর নির্ভরশীল। বিত্রাতে একটি স্কুল ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও রয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে লাক্ষাদ্বীপ সফরে নরেন্দ্র মোদি। ছবি- সংগৃহীত

লাক্ষাদ্বীপের অদূরে অবস্থিত মালদ্বীপ, যেখানে সম্প্রতি চীনের প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। বিত্রা দ্বীপে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ভারত মহাসাগর অঞ্চলে কেন্দ্রের বৃহত্তর সামরিক কৌশলের অংশ। দ্বীপটির কৌশলগত অবস্থান ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি লজিস্টিকস ও নজরদারির সুবিধা দেয়, যা প্রতিরক্ষা ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার দিক থেকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে দ্বীপরাষ্ট্রটির উপর থেকে প্রভাব হারাতে চায় না ভারত। তাই লাক্ষাদ্বীপে একটি সামরিক ঘাঁটি গড়ে নজরদারি জোরদার করতে চাইছে সাউথ ব্লক। এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, আঞ্চলিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ভারত এখন উপকূলীয় ও দ্বীপ অঞ্চলে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা আরও জোরদার করতে আগ্রহী।

বিত্রা দ্বীপ। ছবি- সংগৃহীত

বিশেষজ্ঞদের মতে, লাক্ষাদ্বীপে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করা ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এর মাধ্যমে আরব সাগরের উপর আরও কার্যকর নজরদারি রাখা সম্ভব হবে।

তবে কেন্দ্রের এই পরিকল্পনা সামনে আসতেই বিত্রা দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত এই দ্বীপে প্রতিবাদে নেমেছে কংগ্রেস। লাক্ষাদ্বীপের কংগ্রেস সাংসদ হামদুল্লা সইদের অভিযোগ, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বীপের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে।

দ্বীপের এক স্কুলশিক্ষক অভিযোগ করেছেন, বিত্রায় ইতোমধ্যেই কিছু রাডার ও কটেজ নির্মাণ করা হয়েছে।

এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা তফসিলি উপজাতিভুক্ত মানুষ এবং ৯৯ শতাংশ বাসিন্দার জীবিকার প্রধান উৎস মাছ ধরা। এরইমধ্যে আমরা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের জন্য ৮ হাজার ৮০০ বর্গমিটার জমি দিয়েছি, যেখানে নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। তাছাড়া দ্বীপে এখনও অনেক সরকারি জমি রয়েছে।’

২০১৩ সালের ‘ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পুনর্বাসনে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং স্বচ্ছতার অধিকার আইন’-এর অধীনে একটি সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন (এসআইএ) পরিচালনা করা হয়েছিল।

বিত্রা দ্বীপ। ছবি- সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় রাজস্ব বিভাগের (এইচটি) লাক্ষাদ্বীপের কালেক্টর শিবম চন্দ্রের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। শিবম চন্দ্রে এই বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন। তবে দ্য হিন্দু-কে তিনি জানান, সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে গ্রাম সভাসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।

গত সপ্তাহে এইচটি জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় ‘দ্বীপপুঞ্জ সুরক্ষা অঞ্চল (আইপিজেড) বিজ্ঞপ্তি, ২০১১’-এর অধীনে অনুমোদিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর বৈধতা বাড়াতে একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই নিয়ম আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পাশাপাশি লাক্ষাদ্বীপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এতে আরও বলা হয়েছে, ১১ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে আগামী দুই মাসের মধ্যে অধিগ্রহণের আওতাধীন প্রস্তাবিত এলাকার জরিপ সম্পন্ন করা হবে।

গত ৪ জুলাই জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আইপিজেড-এর অধীনে প্রদত্ত ছাড়পত্রগুলো এখন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বৈধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে যদি কেউ আবেদন করে, তবে সংশ্লিষ্ট উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সুপারিশ সাপেক্ষে মেয়াদ সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য হলো আইপিজেড ২০১১-এর আওতায় দেওয়া পরিবেশ ছাড়পত্রের মেয়াদ ‘পরিবেশ প্রভাব মূল্যায়ন বিজ্ঞপ্তি, ২০০৬’-এর বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা, যা ভারতজুড়ে কার্যকর রয়েছে।