বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার ‘আদিবাসী’ বাসিন্দাদের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের আসাম রাজ্য সরকার। প্রায় দুই মাস আগে রাজ্য মন্ত্রিসভা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই অনুযায়ী এবার চালু হচ্ছে একটি অনলাইন পোর্টাল, যেখানে উপযুক্ত আবেদনকারীরা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বুধবার (৭ আগস্ট) আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য জানান। সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘যে আদিবাসীরা নিজেদের জীবনের প্রতি হুমকি অনুভব করেন এবং সংবেদনশীল এলাকায় বসবাস করেন, তারা খুব শিগগির অনলাইনে অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।’
এর আগে, গত মে মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেছিলেন, ধুবড়ি, মরিগাঁও, নগাঁও, বরপেটা ও দক্ষিণ শালমারা—এসব জেলায় বাঙালি-মুসলমান জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সেখানে আদিবাসীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন, তারা প্রায়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।’
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, লাইসেন্সের আবেদনকারীদের তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে—প্রথমত, আবেদনকারীকে আসামের বাসিন্দা বা আদিবাসী নাগরিক হতে হবে; দ্বিতীয়ত, বসবাসের এলাকা অনুযায়ী তার জীবনের প্রতি হুমকির বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে; তৃতীয়ত, বসবাসের স্থানটি জেলা প্রশাসন ঘোষিত সংবেদনশীল বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হতে হবে, অথবা স্বীকৃত নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে।
তিনি আরও জানান, প্রত্যেক আবেদনকেই নিরাপত্তা মূল্যায়ন, যাচাই ও অনুমোদনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। লাইসেন্স ইস্যুর পর নিয়মিতভাবে তা পর্যালোচনা ও নজরদারির আওতায় রাখা হবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই অনলাইন পোর্টালটি আগস্ট মাসের মধ্যেই চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই উদ্যোগ এমন সময় আসছে যখন ‘বীর লাচিত সেনা’ নামে একটি স্বঘোষিত নজরদারি গোষ্ঠী সাম্প্রতিক সময়ে আসামের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী বাঙালি-মুসলিমদের বিরুদ্ধে একের পর এক আলটিমেটাম জারি করেছে। তারা দাবি করছে, সব বাংলাদেশিকে সাত দিনের মধ্যে আসাম ছাড়তে হবে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের এমন পদক্ষেপ রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে। একদিকে সরকার বলছে এটি শুধু নিরাপত্তার স্বার্থে, অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই পদক্ষেপকে বিদ্বেষমূলক বলে সমালোচনা করছে।