ভারতের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ গুনথার ফেলিঙ্গারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (X) অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি তিনি এক পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করেন এবং খোলাখুলি খালিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন জানান। তাঁর বার্তায় স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, ‘ভারতকে ভেঙে ফেলার ডাক দিচ্ছি। নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার কাছের মানুষ। খালিস্তানিদের স্বাধীনতার জন্য আমাদের বন্ধু প্রয়োজন।’
এই পোস্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে। আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেলিঙ্গারের অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করা হয়। বর্তমানে ভারত থেকে তাঁর প্রোফাইলে প্রবেশ করলে দেখানো হয়, ‘এই অ্যাকাউন্ট আইনি কারণে ভারতে বন্ধ রয়েছে।’
গুনথার ফেলিঙ্গার অস্ট্রিয়ার একটি কমিটির সভাপতি, যা ইউক্রেন, কসোভো, বসনিয়া এবং অস্ট্রিয়ার ন্যাটো সদস্যপদের পক্ষে কাজ করে। যদিও তিনি ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সক্রিয়, তবুও কোনো সরকারি দায়িত্বে নেই। তাই নয়াদিল্লি অস্ট্রিয়া সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠাবে না।
ভারত সরকারের মতে, ফেলিঙ্গারের মন্তব্য দেশের সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি স্বরূপ। বিশেষ করে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদ নিয়ে ভারত অতিমাত্রায় সতর্ক। প্রবাসী খালিস্তানি গোষ্ঠীর কার্যকলাপ আগেও দিল্লিকে কূটনৈতিক চাপের মুখে ফেলে। তাই একজন বিদেশি নাগরিকের প্রকাশ্য আহ্বানকে সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার ওপর আঘাত হিসেবে দেখা হয়েছে।
তবে সমালোচকরা মনে করেন, সরকারের এই পদক্ষেপ সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি নাগরিকের উসকানিমূলক বক্তব্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই তা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে না।
কূটনৈতিক দিক থেকেও বিষয়টি নজরকাড়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর অস্ট্রিয়া সফর করেছিলেন, যা প্রায় চার দশকের মধ্যে প্রথম। সেই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। তাই ফেলিঙ্গারের ব্যক্তিগত মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই ঘটনা কূটনৈতিকভাবে কিছু তাৎপর্য বহন করছে, বিশেষ করে ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে কৌশলগত ভারসাম্যের প্রেক্ষাপটে।
গুনথারের বক্তব্য ভারত সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে। দেশীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা উসকানিমূলক প্রচারণা চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তাও ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন