দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস অঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে অন্তত ৫১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল স্থানীয় সময়) রাতে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো শহরের কিছু অংশ ও আশপাশের এলাকায় অগ্রসর হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চারদিকে গোলাগুলি ও তীব্র গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা যায়।
এক আহত ব্যক্তি বিবিসিকে জানান, ‘ট্যাংকগুলো হঠাৎ করে কোনো সতর্কতা ছাড়াই আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে।’
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, মধ্য ও উত্তর গাজার চারটি স্কুলে অবস্থিত হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে। ওই স্কুলগুলোতে গৃহহীন মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছিল।
আইডিএফ জানায়, হামাস সদস্যরা মুসকাত, রিমাল, বুরেইজ এবং নুসেইরাত নামের চারটি মেয়েদের স্কুলের ভেতরে ‘কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ পরিচালনা করছিল।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, গাজা শহরের তুফাহ্ এলাকায় মুসকাত স্কুলে অন্তত নয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। রিমাল এলাকায় অবস্থিত আল-আমাল এতিমখানায় ছয়জন নিহত হন।
পরবর্তীতে আল-আমাল ইনস্টিটিউট ফেসবুকে এক পোস্টে জানায়, ইসরায়েলি হামলায় তাদের একটি ভবন বিধ্বস্ত হয়, যেখানে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এতে নারী ও শিশুসহ আটজন নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন।
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানায়, গত বুধবার মধ্য গাজার নুসেইরাত মেয়েদের স্কুলে বোমা হামলায় তিনজন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছে। ওই এলাকাটি একটি শরণার্থী শিবির হিসেবে পরিচিত।
ইসরায়েল গাজার ওপর ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে, যার ঠিক আগের দিন তারা ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে এবং দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান চালায়। ইসরায়েল এই অভিযানে ‘সীমিত আকারের’ বলে উল্লেখ করলেও এটি ছিল লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য পরিচালিত।
তবে দক্ষিণ গাজার গত বুধবার ভোররাতে চালানো হামলা সম্পর্কে এখনো আইডিএফ কোনো মন্তব্য করেনি।
খান ইউনুসের দক্ষিণ-পূর্বে কিজান আল-নাজ্জার গ্রামের এক বাসিন্দা বিবিসি আরবিকে জানান, ‘আমার পরিবারের অনেক সদস্য নিহত হয়েছে। ট্যাংকের সঙ্গে ড্রোনও ছিল, যা আমাদের সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করেছিল।’
একজন হাসপাতাল থেকে বলেন, ‘আমরা হঠাৎ গোলার বিস্ফোরণে হতভম্ব হয়ে যাই। প্লেন ও ট্যাংক থেকে অবিরাম বোমা বর্ষণ চলছিল।’
আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘কোনো পূর্ব সতর্কতা ছিল না। লেবানন থেকে রকেট হামলার পরপরই আমরা গাজায় সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হই। আমি অল্পের জন্য বেঁচে গেছি, কিন্তু আমার মেয়ে আহত এবং স্ত্রীর মাথায় আঘাত লেগেছে, দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ এই হামলায় অন্তত ৮২ জন আহত হয়েছে।
গত ডিসেম্বর থেকে ইসরায়েল খান ইউনুসে একাধিক স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যেটি গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় একটি সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত ৪১,৬৮৯ জনকে হত্যা করেছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন