গাজা উপত্যকার অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু করা ‘ম্যাডলিন’ নামের ত্রাণবাহী জাহাজটি মিশরের উপকূলে পৌঁছেছে। ১২ জন আন্তর্জাতিক সমাজকর্মী এই মানবিক অভিযানে অংশ নিচ্ছেন, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনের বহুল আলোচিত মুখ গ্রেটা থুনবার্গ।
রোববার (৮ জুন) ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানায়, জাহাজে অবস্থানরত জার্মান মানবাধিকারকর্মী ইয়াসেমিন আচার একটি বার্তায় জানান, “আমরা এখন মিশরের উপকূলে অবস্থান করছি। সবাই নিরাপদ ও সুস্থ আছি।”
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফিলিস্তিনের জলসীমায় পৌঁছাবে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা 'ম্যাডলিন' জাহাজটি। রোববার এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এ তথ্য জানান জাহাজে থাকা ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান। তিনি লিখেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ফিলিস্তিনের জলসীমায় পৌঁছাব, যা অবৈধভাবে দখল ও নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল।’
রিমা হাসান বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, ‘ম্যাডলিন’ যেন নিরাপদে গাজায় পৌঁছাতে পারে এবং জাহাজে থাকা সকলে নিরাপদ থাকে, তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, এই জাহাজে হামলা বা বাধা দেওয়া হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে, ‘ম্যাডলিন’ জাহাজটিকে গাজা উপকূলে পৌঁছাতে দেবে না বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। জাহাজটি বাধা অমান্য করলে তা জব্দ এবং আরোহীদের আটক করা হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার নাগাদ জাহাজটি গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল বা ১৮৫ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছাবে। এই এলাকাটি অতীতে গাজামুখী অন্যান্য ত্রাণ জাহাজকে আটকে দেওয়ার স্থান হিসেবে পরিচিত।
২০১০ সালে তুরস্কের ‘মাভি মারমারা’ নামের ত্রাণ জাহাজ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করার সময় ইসরালি বাহিনীর হামলায় ১০ জন বেসামরিক লোক নিহত হন।
সম্প্রতি, মে মাসে ‘কনসায়েন্স’ নামের আরেকটি জাহাজ গাজা যাওয়ার পথে ড্রোন হামলার শিকার হয়। পরে সাইপ্রাস ও মাল্টা যৌথভাবে উদ্ধারকারী জাহাজ পাঠায়।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন মূলত গাজা উপত্যকার ওপর আরোপিত অবরোধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১০ সালে গঠিত একটি জোট। ইসরাইলি অবরোধের কারণে গাজায় যে মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে এবং তারা দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫৪,৮০০ জন নিহত এবং ১,২৫,৬৫০ জন আহত হয়েছেন।
তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এর বেশি বলে জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মানুষ চাপা পড়ে আছেন, যাঁদের সবাইকে মৃত বলে মনে করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :