ঢাকা শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১২০ জনের মৃত্যু

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৫, ১০:৫০ এএম
ইসরায়েলের হামলায় নিহত স্বজনদের আহাজারি । ছবি- সংগৃহীত

গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় এক দিনের ব্যবধানে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১২০ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও সাড়ে তিন শতাধিক মানুষ। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন অনেক ত্রাণপ্রার্থী, যারা ক্ষুধা মেটাতে এসেছিলেন ত্রাণকেন্দ্রে।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজার চিকিৎসা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলি ও বিমান হামলায় এ প্রাণহানি ঘটে। যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার সকাল থেকে এক দিনে ৫৭ জন ত্রাণপ্রত্যাশী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৩৬৩ জন। এসব ঘটনা ঘটেছে বিতরণকেন্দ্রগুলোতে, যেগুলোর পরিচালনায় রয়েছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত এ সংস্থাটি বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে। গাজায় ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতেই এসব কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে এবং বারবার সেগুলোকেই হামলার লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণব্যবস্থাকে ‘ব্যাপক সফলতা’ বলে দাবি করছে, তবুও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন রাষ্ট্র এ মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, এসব বিতরণকেন্দ্রে মানুষের উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যে গুলিবর্ষণ মানবিক বিপর্যয়ের চূড়ান্ত উদাহরণ।

বিশেষ করে রাফাহ ও নেৎসারিম করিডরে অবস্থিত বিতরণকেন্দ্রগুলো “মানবিক গণহত্যার কেন্দ্রস্থল” হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ২৭ মে থেকে জিএইচএফ তাদের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এসব স্থানে ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২২০ জন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও স্বীকার করেছে যে, তারা নেৎসারিম এলাকায় ‘সতর্কতামূলক গুলি’ চালিয়েছে, যা অনেক মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকতে পারে।

গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তরের ভাষ্য, ইসরায়েল সুপরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে, যাতে ক্ষুধার্ত জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। তারা খাদ্য অবরোধ করে এবং ত্রাণপ্রার্থীদের গুলি করে মারার পথ বেছে নিয়েছে।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং জানানো হয়েছে যে, তারা জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেবে না। কারণ এতে ব্যবহৃত হয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী-সমর্থিত বেসরকারি ঠিকাদার, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আদর্শের পরিপন্থি।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, জিএইচএফ-এর ত্রাণকেন্দ্রগুলো আসলে বর্তমান সহিংসতা থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল এবং এতে বিপুল সম্পদের অপচয় হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, তারা ও অন্যান্য অভিজ্ঞ সংস্থাগুলো গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে সক্ষম, কিন্তু ইসরায়েল এখনো তাদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।

ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, এবং দুর্ভিক্ষের শঙ্কা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

বিশ্ব রাজনীতির বিশ্লেষক ক্রিস নিউটনের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল এমন এক ত্রাণব্যবস্থা তৈরি করেছে, যার ভেতরে রয়েছে গোলমাল, হিংসা এবং জনগণকে গাজার দক্ষিণে সরিয়ে ক্ষুধার মুখে ঠেলে দেওয়ার সুপরিকল্পিত কৌশল।

জিএইচএফ প্রতিদিন এক ব্যক্তিকে মাত্র ১,৭৫০ ক্যালরির খাবার সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে- যা আন্তর্জাতিক জরুরি সহায়তার মানদণ্ডের চেয়ে অনেকটাই কম।

নিউটন বলেন, এই ক্যালরি মাত্রা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকায় পরিচালিত এক অনাহার গবেষণার কাছাকাছি। বরং ইসরায়েল ২০০৮ সালে গাজার জন্য যে সর্বনিম্ন পুষ্টির মান নির্ধারণ করেছিল, তারও নিচে।