ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যার উদ্দেশ্যে ‘অপারেশন নার্নিয়া’ পরিচালনা করেছিল ইসরায়েল। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অভিযানটি পরিচালনা করে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ পরিচালনা করে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ নেতাদের ও পারমাণবিক বৈজ্ঞানিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০-এর ১২০ জন সদস্য এবং বিমানবাহিনীর সমন্বিত দল।
অভিযান শুরুর আগে ইরানিদের বিজ্ঞানীদের ৪টি স্তরে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়—যাদের মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছেন সামরিক দক্ষতায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা এবং যাদের পরিবর্তন করা সবচেয়ে কঠিন- এমন ব্যক্তিরা। এর ভিত্তিতে তৈরি করা হয় ‘হিটলিস্ট’, যেখানে সবচেয়ে বেশি হুমকি হয়ে ওঠা বিজ্ঞানীদের নাম ছিল শীর্ষে।
অভিযানে নিহত ইরানি বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন—ফেরেইদুন আব্বাসি (পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ), মোহাম্মদ মাহদি তাহরানচি (পদার্থবিদ), আকবর মাতলালি জাদে (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার), সাঈদ বেরাজি (উপাদান প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ), আমির হাসান ফাকাহি (পদার্থবিদ), আবদুল হামিদ মিনুশাহর (রিঅ্যাক্টর পদার্থবিদ), মনসুর আসগারি (পদার্থবিদ), আহমদ রেজা দাওলপারকি দরিয়ানি (পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ), আলি বাখায়ী কাতেহরেমি (যান্ত্রিক প্রকৌশলী) প্রমুখ।
অপারেশন নার্নিয়ার পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা একটি লক্ষ্য-ব্যাংক তৈরি করছিলাম। ব্রেকথ্রু আসে যখন একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি ও একটি বিমান ঘাঁটি শনাক্ত করি। তারপর শুরু হয় বিভিন্ন দলে ভাগ করে মিশন— কে রাডার ধ্বংস করবে, কে কমান্ড সেন্টার, আর কে বিজ্ঞানীদের মারবে।’
এই অভিযানে ইসরায়েল নতুন কৌশল অবলম্বন করে। কৌশলটি হল মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে ‘পার্সিয়ান ভাষায়’ একটি বার্তা এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা হয়, যেখানে ইরানি নাগরিকদের মোসাদের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা বুঝতে পারি, আপনি কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন। আমাদের প্রিয়জনেরা যারা এই পরিস্থিতির শিকার, তারাও ইসরায়েলকে বার্তা দিচ্ছে যেন ইরানকে গাজা বা লেবাননের মতো ভাগ্য না ভোগ করতে হয়।’
বার্তার শেষে মোসাদের একটি লিংক শেয়ার করে বলা হয়—ভিপিএন বা এনক্রিপটেড সংযোগ ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মোসাদের এই ‘অপারেশন নার্নিয়া’ ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যার মাধ্যমে পারমাণবিক অগ্রগতি বন্ধ ও ইরানজুড়ে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রচেষ্টা।