কাতারের দোহা উপকণ্ঠে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমান ঘাঁটি আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান। হামলার ফলে ঘাঁটির ফ্লাইট লাইন, রানওয়ে ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, হামলার সময় ঘাঁটিতে শতাধিক মার্কিন সেনা ছিল। কাতারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে প্রতিহত করতে পারলেও মূল ঘাঁটির বড় অংশই ধ্বংস হয়ে যায়।
কাতারে অবস্থিত আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি। ঘাঁটির আয়তন প্রায় চব্বিশ হেক্টর। এখানে রয়েছে দুটি তিন হাজার সাতশ পঞ্চাশ মিটার লম্বা রানওয়ে।
ঘাঁটিতে প্রায় দশ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের ফরোয়ার্ড সদর দপ্তর এই ঘাঁটি থেকেই পরিচালিত হতো। মধ্যপ্রাচ্যের বিমান, ড্রোন ও জ্বালানি ট্যাংকারের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রও ছিল এই ঘাঁটি।
ঘাঁটিতে তিনশ ঊনসত্তরতম এয়ার এক্সপেডিশনারি উইং এবং ছয় শ নয় নম্বর এয়ার অপারেশনস সেন্টার অবস্থিত ছিল। এখান থেকেই ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে বিমান অভিযান পরিচালনা হতো।
ইরানের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত ঘাঁটি থেকে প্রায় চল্লিশটি সামরিক বিমান ইউরোপে সরিয়ে নেয়। কাতারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আংশিক হামলা প্রতিহত করতে পারলেও ঘাঁটির ভেতরের বড় অংশে বিস্ফোরণ হয় বলে জানা গেছে।
এই ঘাঁটি ধ্বংস হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সামরিক সক্ষমতায় বড় ধরনের আঘাত লেগেছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক অভিযান পরিচালনায় মারাত্মক বিলম্ব ও সরঞ্জাম ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
বহু বছর ধরে আল উদেইদ ঘাঁটিকে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সামরিক আধিপত্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে সেনা ও অস্ত্র দ্রুত পাঠানোর জন্য এই ঘাঁটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ছিল।
এই ঘাঁটির পতনের ফলে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগতভাবে অনেকটাই পিছিয়ে গেছে। ইরান এই হামলার মাধ্যমে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স।