মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ১২টি দেশে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। ইরান হামলার পাল্টা জবাবে এসব ঘাঁটিতে হামলার শঙ্কা রয়েছে। কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ইতোমধ্যে ইরানের হামলার স্বীকার হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সর্বসাকুল্যে ১৯টি মার্কিন সামরিক স্থাপানা রয়েছে। সম্প্রতি ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনায় ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প।
মধ্যপ্রাচ্যে যেসব দেশে মার্কিন ঘাঁটি আছে তা হলো : কাতার, ইরাক, ইসরায়েল, সৌদি আরব, জর্ডান, কুয়েত, বাহরাইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সিরিয়া।
স্বতন্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’-এর মতে, মার্কিন সামরিক বাহিনী জিবুতি এবং তুরস্কের বড় ঘাঁটিগুলোও ব্যবহার করে, যা অন্যান্য আঞ্চলিক কমান্ডের অংশ হলেও প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অভিযানের সময় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
এই প্রতিবেদনে মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান প্রধান মার্কিন ঘাঁটিগুলোর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এসব ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)’ বা মার্কিন সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের অধীনে।
কাতার
কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটিটি পুরো অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন ঘাঁটি। এখানে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এবং এর বিমান বাহিনীর ফরওয়ার্ড হেডকোয়ার্টার রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মে মাসে মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় এই ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।
স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, সম্প্রতি ওয়াশিংটন আল উদেইদের রানওয়ে থেকে কয়েক ডজন বিমান প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে মার্কিন হস্তক্ষেপের পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইরানের সম্ভাব্য হামলা থেকে রক্ষা করার জন্যই সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
গত ৫ জুন ‘প্ল্যানেট ল্যাবস’-এর প্রকাশিত ছবিতে ‘সি-১৩০ হারকিউলিস ট্রান্সপোর্ট’ (একটি বিশেষ সামরিক পরিবহন বিমান) এবং ‘রেকোননাইসেন্স প্লেন’ (বিশেষ সামরিক বিমান যা আকাশপথে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়)-সহ ৪০টি বিমান দেখা গিয়েছিল।
এর ঠিক দুই সপ্তাহ পরে সেখানে মাত্র তিনটি বিমান দেখা গিয়েছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রসঙ্গত, কাতারে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
বাহরাইন
বাহরাইনে মার্কিন নৌবাহিনীর পঞ্চম ফ্লিটের সদর দপ্তর রয়েছে, যা পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর, আরব সাগর এবং কেনিয়ার দক্ষিণে পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে মার্কিন নৌবাহিনীর দায়িত্বে রয়েছে।
এই ফ্যাসিলিটি ‘ন্যাভাল সাপোর্ট অ্যাক্টিভিটি বাহরাইন’ নামে পরিচিত। এখানে মার্কিন নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের সদর দপ্তরও রয়েছে। প্রায় ৯ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে এই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রে।
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে কুয়েতে সবথেকে বেশি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাম্প আরিফজান, যেখানে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের হেডকোয়ার্টার রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ক্যাম্প আরিফজান ও আলী আল সালেম বিমান ঘাঁটি মিলিয়েই মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আল ধাফরা বিমান ঘাঁটিতে একটি মার্কিন সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। এটি একটি কৌশলগত ঘাঁটি যা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং কম্ব্যাট এয়ার অপারেশন (যুদ্ধ বিমান অভিযানে) সাহায্য করে।
ইরাক
ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিগুলো ‘ইসলামিক স্টেট’ নামক গোষ্ঠীকে দমিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে কাজ করে। এখানে মার্কিন সামরিক বাহিনী মূলত কুর্দিস্তানের দুটি বিমান ঘাঁটি- আল আসাদ এবং ইরবিল থেকে নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই ঘাঁটিগুলো এবং ওই দেশের অন্যান্য ছোটখাটো ঘাঁটিকে ইরানের-মিত্র গোষ্ঠীগুলির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
সিরিয়া
সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। সিরিয়াজুড়ে বিভিন্ন ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছে যারা এই গোষ্ঠীটির পুনরুত্থান ঠেকাতে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে।
ওয়াশিংটন সিরিয়া থেকে সামরিক ঘাঁটির সংখ্যা কমিয়ে আনতে ঘোষণা
করেছে। পাশাপাশি দেশটির নতুন সরকার আহমেদ শারার সঙ্গে আলাপ আলোচনার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।