অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ ও মানবিক সংকটের ভয়াবহ চিত্র প্রতিদিন নতুন করে সামনে আসছে। আজ সকালে দক্ষিণ ও মধ্য গাজার বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্যের আশায় অপেক্ষমাণ নিরপরাধ মানুষদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী আবারও গুলি চালিয়েছে।
এতে অন্তত ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। তারা ছিলেন ক্ষুধার্ত, দুর্বল এবং তাদের শিশুদের জন্য খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়ানো মানুষ। এই গণহত্যামূলক হামলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামের অফিসিয়াল চ্যানেলে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। হামলার এই ঘটনাগুলো ঘটেছে এমন সব এলাকায়, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় গড়ে তোলা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এসব কেন্দ্র কার্যত ‘মরণফাঁদ’-এ পরিণত হয়েছে, যেখানে ক্ষুধার্তদের জড়ো করে পরে তাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে। ‘মানবিক ত্রাণের আশায় দাঁড়িয়ে থাকা নিরপরাধ মানুষদের হত্যাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে হামাস। তারা বলছে, এ ধরনের গণহত্যা আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ও লজ্জাজনক ঘটনা।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ নতুন করে নিহত ৭৯ জনের মরদেহ হাসপাতালে পৌঁছেছে। ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৭৭ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন।
বিশেষ করে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরু করার পর থেকে গাজায় সহিংসতা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে পাঁচ হাজার ৭৫৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং আহত করেছে প্রায় ১৯ হাজার ৮০০ জন। দক্ষিণ ও মধ্য গাজা এই হত্যাযজ্ঞের প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজা যেন এক বিশাল শবঘরে পরিণত হয়েছে। দিনের পর দিন নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, ক্ষুধা ও চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে বহু শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। বিশ্বের চোখের সামনে এ এক নিষ্ঠুর মানবিক বিপর্যয়, যার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।