ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে উত্তর গাজায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০৫:৩৩ এএম
ইসরায়েলি হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতেে উত্তর গাজা ছেড়ে চলে যাচ্চে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: সংগৃহীত

রক্তমাখা দিন পেরিয়ে গাজায় যখন যুদ্ধবিরতির প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে, ঠিক তখনই নতুন করে ছায়া ফেলছে যুদ্ধের আতঙ্ক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বান এবং মধ্যস্থতাকারীদের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল উত্তর গাজায় বড় ধরনের হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।  

গাজা সিটি ও জাবালিয়ার বাসিন্দারা যখন দক্ষিণের আল-মাওয়াসিরে সরে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই সেই ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থলেই’ ঝরছে রক্ত। ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, তারা সেখানে একটি বিস্তৃত ও আরও তীব্র সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে গাজা সিটি ও জাবালিয়ার বাসিন্দাদের দক্ষিণে আল-মাওয়াসিরে সরে যেতে বলা হয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত সেই আল-মাওয়াসিরেও হামলা চালিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন, জানাচ্ছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে তিন শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজন রয়েছেন, যারা আল-মাওয়াসিরেই আশ্রয় নিয়েছিলেন।

নিহত শিশুদের বাবা জিয়াদ আবু মারুফ বলেন, ‘এক মাস আগে ইসরায়েলের কথামতো আমরা এখানে এসেছিলাম নিরাপত্তার আশায়।’

তার স্ত্রী ইমান আবু মারুফ কাঁপা গলায় বলেন, ‘আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম, তখনই বোমা পড়ল। আমার সন্তানরা আর নেই, যারা বেঁচে আছে তারা হাসপাতালে।’

এই সব ঘটনার মাঝেই গাজায় যুদ্ধ থামিয়ে জিম্মি বিনিময়ের উদ্দেশ্যে নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা। রোববার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও যুদ্ধবিরতির পক্ষে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।

কিন্তু হামাসের এক শীর্ষ নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, আলোচনার পথ এখনো বন্ধ। তবে কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা এখনো আশাবাদী, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ শেষ পর্যন্ত চুক্তি সম্ভব করে তুলতে পারে।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাম্প এই মামলাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন, এটি যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে বিলম্বিত করছে। তার এই মন্তব্যের জবাবে ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ কড়া ভাষায় বলেন, ‘ট্রাম্পের উচিত একটি স্বাধীন দেশের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ না করা।’

গাজার মানবিক পরিস্থিতিও ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১১ সপ্তাহ পর তা আংশিক শিথিল করা হয়।

বর্তমানে ইসরায়েল-সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) এর মাধ্যমে সীমিত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তবে জাতিসংঘ এই ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করেছে।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর মুখপাত্র জুলিয়েট টুমা একে “মৃত্যুপুরী ব্যবস্থাপনা” বলে অভিহিত করেছেন। তার ভাষায়, ‘শুধুমাত্র জাতিসংঘ এবং নিরপেক্ষ মানবিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমেই সহায়তা সুশৃঙ্খল ও কার্যকরভাবে বিতরণ করা সম্ভব।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ায় শুরু হওয়া সংঘাত আজও থামেনি। ওই হামলায় ১২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। পাল্টা অভিযানে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৬,৫০০-এর বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছে।

যুদ্ধবিরতির নানা সম্ভাবনা ও আলোচনার উদ্যোগের মাঝেও যেভাবে গাজার আকাশে বোমা ঝরছে, তাতে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে আসলে এই যুদ্ধে কারো কণ্ঠ কতটা শ্রুতিগ্রাহ্য, আর নিরীহ মানুষের জীবন কতটা নিরাপদ?