গাজা উপত্যকাকে শিশুদের কবরস্থান ও অনাহারের উপত্যকায় পরিণত করেছে ইসরায়েল বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি।
সামাজিক মাধ্যম এক্সের এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
পোস্টে ফিলিপ লাজারিনি লিখেন, ইসরায়েল গাজায় একটি নিষ্ঠুর ও পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের ফাঁদ তৈরি করেছে।
তিনি লিখেন, ‘গাজার মানুষ এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে তাদের সামনে বেছে নেxয়ার মতো মাত্র দুটি পথ রয়েছে। ক্ষুধায় মারা যাওয়া অথবা গুলিতে প্রাণ হারানো।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে এবং ইসরায়েলের অবরোধের কারণে চিকিৎসা সরঞ্জামও পৌঁছাতে পারছে না।
এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক রেডক্রস, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন সংস্থা সাহায্য পাঠাতে চাইলেও সীমান্ত বন্ধ থাকায় তারা সফল হচ্ছে না।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি তিনি বাতিল করেছেন। এরপর থেকেই গাজায় কোনো ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।
২০২৪ সালের শুরু থেকে 9 হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসা পেয়েছে। তবে সহায়তা বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, প্রতিটি দিন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শিশুদের জন্য এক নতুন আতঙ্ক নিয়ে আসছে। ক্ষুধা, রোগ ও মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
‘এই শিশুরা বোমা থেকে বেঁচে গেছে, কিন্তু এখন তারা ক্ষুধায় মরতে বসেছে,’ বলেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল।
তিনি আরও বলেন, ‘এই অবস্থার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না।’
চিকিৎসক ডা. আহমেদ আবু নাসির জানান, শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও চর্বিসহ অনেক পুষ্টিকর উপাদান এখন আর গাজায় পাওয়া যাচ্ছে না।
ভবঘুরে জীবনযাপন করা বহু পরিবার এখন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে, কিন্তু তাদের হাতে কোনো খাবার নেই।
একজন মা বলেছেন, ‘আমি চাই না আমার শিশু ক্ষুধায় মারা যাক।’ তিনি আরও বলেন, ‘খাবার ভালো না খারাপ, পুষ্টিকর কি না– আমরা তা ভাবার সুযোগ পাই না। শুধু চাই পেটে কিছু পড়ুক।’
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও অন্যান্য সংস্থা বলছে, লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি বর্তমানে চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। বিশেষ করে উত্তর গাজা এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
গাজা থেকে একজন সহায়তা কর্মী আমজাদ শাওয়া বলেছেন, ‘আমাদের কাছে কোনো রসদ নেই, ওষুধ নেই, শিশুদের জন্য কোনো সহায়তা নেই। সামনে আরও মৃত্যু দেখার আশঙ্কা রয়েছে।’