ঢাকা শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স-জার্মানি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম
ইরানের পতাকা। ছবি- সংগৃহীত

ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা নতুন করে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের চুক্তির আওতায় প্রত্যাহার করা জাতিসংঘের বড় ধরনের এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশ তিনটি। এ পদক্ষেপের ফলে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কার্যকর হতে পারে ‘স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম’, যার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞাগুলো আবারও কার্যকর হবে। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের চুক্তির অংশীদার তিন দেশ (ই৩) দুই সপ্তাহ আগে সতর্ক করেছিল—আগস্টের শেষ নাগাদ ইরান যদি ‘কূটনৈতিক সমাধান’ মেনে না নেয়, তবে তারা এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।

এদিকে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনাও জুনের পর থেকে স্থগিত রয়েছে। জুনে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় এবং এরপর ইরান জাতিসংঘ-সমর্থিত পরিদর্শকদের প্রবেশে বাধা দেয়।

২০১৫ সালের চুক্তিতে স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার আওতায় ছিল—কোনো অংশীদার রাষ্ট্র যদি মনে করে ইরান তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, তাহলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে এ উদ্যোগ নেয়। এখন নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখা হবে নাকি পুনর্বহাল করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পরিষদের হাতে ৩০ দিন সময় রয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গ ‘স্পষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের ‘কোনো বেসামরিক যৌক্তিকতা নেই’ বলেও উল্লেখ করে তারা। আরও বলা হয়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য স্পষ্ট হুমকি’ হয়ে রয়েছে।

তবে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ইরানের সঙ্গে ‘গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা’ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশ তিনটি। তবে ইরান আগেই সতর্ক করেছিল, স্ন্যাপব্যাক কার্যকর হলে এর ‘প্রতিক্রিয়া’ দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ইরানের ওপর বহু বছরের অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছিল ২০১৫ সালের চুক্তির মাধ্যমে, যার বিনিময়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধতা আনতে সম্মত হয়। ওই চুক্তি হয় ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে।

কিন্তু ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন এবং পারমাণু-সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। এর জবাবে ইরানও তার পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়, যা আবারও সংকট ঘনীভূত করে।

পাশ্চাত্য শক্তি ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এখনো নিশ্চিত নয় যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই সীমিত। তবে ইরান জোর দিয়ে বলছে, তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ বেসামরিক এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো পরিকল্পনা নেই।