ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘মার্কিনিদের উচিত ইসরায়েলের কাছ থেকে পাওয়া সুবিধাগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া।’ পশ্চিম জেরুজালেমে সফররত মার্কিন কংগ্রেসীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি মোবাইলফোন, ওষুধ ও খাদ্যপণ্যের উদাহরণ টেনে এই মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি পণ্য প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আপনাদের কাছে কি মোবাইলফোন আছে? আপনারা এখন হাতে ইসরায়েলের একটি অংশ ধরে আছেন। বহু মোবাইলফোন, ওষুধ, খাবার...আপনারা কি চেরি টমেটো খান? জানেন কোথায় এর উৎপত্তি? আমি চেরি টমেটো পছন্দ করি না, তবে আরও অনেক কিছুর মতোই এটি ইসরায়েলের পণ্য।’
তিনি এসব পণ্যকে মানবতার জন্য অবদান হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা পণ্য তৈরি করতে পারি, উৎপাদন করতে পারি।’
আন্তর্জাতিক মহলে গাজায় গণহত্যা ও অস্ত্র সরবরাহে বিধিনিষেধের কারণে ইসরায়েল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে—এমন অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি নেতানিয়াহুর। তিনি বলেন, কিছু দেশ অস্ত্রের যন্ত্রাংশের চালান বন্ধ করেছে। আমরা কি এ থেকে বের হয়ে আসতে পারি? হ্যাঁ, পারি। আমরা অস্ত্র উৎপাদনে বেশ ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের মতোই আমরা অস্ত্রব্যবস্থার তথ্যও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগাভাগি করি। আপনাদের গোয়েন্দা তথ্যের একটি বড় অংশ আমরা সরবরাহ করি।’
মার্কিন কংগ্রেসীয় প্রতিনিধিদলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘অতীত ও বর্তমানে ইসরায়েলের সামরিক বিষয়ে যে দ্বিদলীয় সমর্থন ছিল, আমরা তার মর্যাদা দিই। এই সমর্থন দুর্বল করার চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অব্যাহতভাবে মার্কিন সহায়তা পাচ্ছি।’
ইসরায়েল বিদেশি সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারবে উল্লেখ করে নেতানিয়াহু প্রতিশ্রুতি দেন, ‘পশ্চিম ইউরোপের যারা মনে করে আমাদের বঞ্চিত করতে পারবে, তারা সফল হবে না। আমরা এই অবরোধ ভাঙতে পারব।’
প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নজরদারির মুখোমুখি। নেতানিয়াহু সতর্ক করেন, ‘এক ধরনের বিচ্ছিন্নতার’ মুখে দেশটি পড়েছে, যা কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে।
অস্ত্র বাণিজ্যকে বিচ্ছিন্নতার মূল খাত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অস্ত্রশিল্প গড়ে তুলতে হবে—আমরা হব এথেন্স এবং সুপার স্পার্টার সমন্বয়। আগামী কয়েক বছর আমাদের এসব বিচ্ছিন্নতার প্রচেষ্টা মোকাবিলা করতে হবে।’
গাজায় অপরাধের জন্য ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ইতালি ইসরায়েলের ওপর আংশিক বা পূর্ণ অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে ইসরায়েলের অধিকাংশ অস্ত্র আমদানি আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যেখানে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।
নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, ‘চরম ইসলামপন্থি এজেন্ডা’ ইউরোপীয় পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করছে।
ইসরায়েলি বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘পাগলামি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, বিচ্ছিন্নতা হলো ‘নেতানিয়াহুর ব্যর্থ নীতির ফল’। সাবেক সামরিক প্রধান গাদি আইজেনকট বলেন, ‘জিম্মিদের বিষয়টি ছেড়ে দিয়ে ও বিশ্বে ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করে নেতানিয়াহু ও তার সহযোগীরা যে ক্ষতি করেছেন, তা পূরণের দ্বিতীয় সুযোগ আর আসবে না।’
সব সমালোচনা সত্ত্বেও নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইসরায়েলের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি শেয়ারবাজারের উত্থানের দিক তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা অস্ত্র উৎপাদন আরও বাড়াব, দুর্বল পশ্চিম ইউরোপীয় নেতাদের ওপর নির্ভর করব না।’