ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সোনাগাজীতে নিয়ম না মেনে এলপি গ্যাস বিক্রির ধুম

সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ১১:৩০ এএম
গ্যাস সিলিন্ডার। ছবি- সংগৃহীত

সরকারি আইন ও কোনো প্রকার নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চায়ের দোকান, কনফেকশনারি, মুদি, সার, চাল, ক্রোকারিজ, হার্ডওয়্যার, ইলেকট্রনিক্স এমনকি ফ্লেক্সিলোডের দোকানেও খোলামেলাভাবে এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানে সিলিন্ডার ফেলে রেখে নির্বিঘ্নে চলছে ব্যবসা।

এসব দোকানে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ দোকানেই তা অনুপস্থিত। জনবহুল এলাকায় অনুমোদনহীনভাবে এভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি জনসাধারণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। যেকোনো সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা আগুন লাগার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেক দোকানি জানেনই না গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য আলাদা লাইসেন্স প্রয়োজন। কেউ কেউ বলছেন, লাইসেন্স করতে গেলে অনেক টাকা লাগে এবং বিভিন্ন দপ্তরের হয়রানির শিকার হতে হয়। অধিকাংশ দোকান শুধু পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে গ্যাস বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে।

সমবায় (কাশ্মির) বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে অনুমোদন লাগে, এটা জানা নেই।’

অন্য এক ব্যবসায়ী স্বপন জানান, ‘বাজারের অনেক দোকানেই তো গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হয়, লাইসেন্স লাগে কি না জানি না।’

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি ও মজুদের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বিধি অনুসারে, খুচরা বিক্রেতা সর্বোচ্চ ১০টি সিলিন্ডার রাখার অনুমতি পায়, তবে সে ক্ষেত্রেও অবশ্যই ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নিতে হয়। ১০টির বেশি সিলিন্ডার মজুদ ও বিক্রির জন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পৃথক লাইসেন্স প্রয়োজন।

গত বছরের এলপিজি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া, সিলিন্ডার সংরক্ষণের স্থান সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সেখানে কোনো ধরনের আগুন বা বৈদ্যুতিক সংস্পর্শ যেন না থাকে, সে বিষয়েও কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

সোনাগাজী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার নুর আলম সাংবাদিকদের জানান, এ উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অনুমোদন ছাড়া এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে মাত্র দু-একজন ব্যবসায়ী লাইসেন্স করতে ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করেছেন বলেও তিনি জানান।

সোনাগাজী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় সিলিন্ডার রাখায় জনজীবনে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রিগ্যান চাকমা জানান, ‘যেখানে-সেখানে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল বিক্রির বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। জননিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পৌর শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। কোনোভাবেই সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলা হবে না।’