কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সমর্থিত (এআই) মিডিয়া প্রচারণায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চীনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর জেরে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসায় ইসরায়েল-চীন সম্পর্ক নতুন উত্তেজনার মুখে পড়েছে। খবর ওয়াইনেট।
চলতি সপ্তাহে জেরুজালেমে ২৫০ জন মার্কিন আইনপ্রণেতার এক প্রতিনিধিদলের সামনে নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, কাতারের পাশাপাশি চীনও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অর্থায়নে পরিচালিত মিডিয়া ও বৈধতা-বিরোধী প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে। তিনি একে ‘মিডিয়া অবরোধ’ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেন যে ইসরায়েল কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকিতে পড়ছে।
সরকারি এক সম্মেলনেও নেতানিয়াহু বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে ইসরায়েলকে ‘সুপার-স্পার্টা’তে রূপান্তরের আহ্বান জানান।
দুই দিনের নীরবতার পর ইসরায়েলে অবস্থিত চীনের দূতাবাস এক বিরল ও কড়া ভাষার বিবৃতি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। তাতে বলা হয়, ‘ইসরায়েলি নেতার মন্তব্য ভিত্তিহীন, চীন-ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষতি করে এবং আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি।’ বিবৃতিতে ইসরায়েলের গাজা অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, স্থায়ী শান্তির জন্য ‘অবিরাম বোমাবর্ষণ নয়, বরং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সৃজনশীল কূটনীতি’ প্রয়োজন।
ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের মতে, নেতানিয়াহুর এই প্রকাশ্য অবস্থান অস্বাভাবিক। সাইবার নিরাপত্তা ও চীন বিশ্লেষক হারেল মেনাশ্রি বলেন, ‘চীনারা কখনও আমাদের বন্ধু ছিল না। ৭ অক্টোবরের যুদ্ধের পর তাদের অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে।’
তিনি চীনা পাঠ্যপুস্তকে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দেওয়া এবং অতীতে নেতানিয়াহুর চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার উদাহরণ টেনে সমালোচনা করেন।
চীনবিষয়ক আরেক বিশ্লেষক ইউভাল ওয়েইনরিব মনে করেন, এই মন্তব্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে একাত্মতা প্রদর্শনের কৌশল হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যখন কোনো সরকারপ্রধান এ ধরনের অভিযোগ আনেন, বেইজিং তা ভুলে যায় না।’
সম্প্রতি চীন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পুনর্গঠনে সহায়তা দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে ইসরায়েল। এ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড. ইয়েচিয়েল লেইটার চীনের ভূমিকা নিয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা ইসরায়েল-চীন সম্পর্কের ইতিহাসে নতুন তলানিকে চিহ্নিত করছে। যেখানে বেইজিং নিজেকে ফিলিস্তিনি অধিকারের রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে, আর জেরুজালেম আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে চীনা প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।