লেবাননের শহরগুলোতে চলমান ইসরায়েলি হামলার কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে, বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে এবং স্থানীয়রা নিখোঁজ হচ্ছে। তবুও এই সংকটের মধ্যে দেশের শহরগুলোর রাস্তায় দেখা যায় নতুন ধরনের ফ্যাশনের উত্থান: ৯০-এর দশকের বিবর্ণ জিন্স, জীর্ণ চামড়ার জ্যাকেট এবং প্যাচওয়ার্ক পোশাক। তবে ঘনিষ্ঠভাবে দেখলে বোঝা যায়, এই ফ্যাশন বিপ্লব কেবল স্টাইলের জন্য নয়, বরং লেবাননের টেকসই ও নীতিগত ফ্যাশনের উদ্যোগের ফল।
গত দশকে কয়েকটি নতুন সংস্থা এই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। ২০১৬ সালে ওমর ইতানি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ফ্যাব্রিকএইড লেবানন একটি সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক উদ্ধার, বাছাই, পরিষ্কার, পুনঃচয়ন এবং পুনর্বণ্টন করে।
অন্যদিকে, ডিপো ভেন্টে এবং ভিনটেজ ম্যাজিক বৈরুত পূর্ব-মালিকানাধীন পণ্যের আরও কিউরেটেড নির্বাচন অফার করে। এছাড়াও, ইমার্জেন্সি রুম বৈরুত এবং তাকাসিস-এর মতো আপসাইক্লিং লেবেলগুলি কাপড়, স্ক্র্যাপ এবং দানকৃত পোশাককে নতুন করে ডিজাইন করে অনন্য পণ্য তৈরি করে।
লিন এল হাজ্জ, তাকাসিসের প্রতিষ্ঠাতা, বলেন, ‘লেবাননের ফ্যাশন সম্প্রদায়ে টেকসই পরিবর্তনের মূল অনুঘটক ছিল পরিবেশগত উদ্বেগ। দেশটি দীর্ঘদিন অতিরিক্ত ব্যবহারের সংস্কৃতির শিকার ছিল। লেবাননের মানসিকতা ঐতিহাসিকভাবে সর্বশেষ প্রবণতা এবং বিলাসবহুল ফ্যাশনের প্রতি মনোযোগী ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষ মিতব্যয়ী হলেও তা কখনো গর্বের সঙ্গে বলা হতো না; বরং এটি ছিল বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।’
২০১৫ সালে বৈরুতের প্রধান ল্যান্ডফিল বন্ধ হলে বর্জ্য সংকট তীব্র হয়। আবর্জনা রাস্তায় এবং নদীর তলদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মানুষ তখন প্রায়শই বর্জ্য পোড়ানো বা অবৈধ ডাম্পিং-এর আশ্রয় নেয়।
লিন বলেন, ‘অতিরিক্ত ব্যবহারের সমস্যা হঠাৎ করেই সারা দেশে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।’
এরিক ম্যাথিউ রিটার, ইমার্জেন্সি রুম বৈরুতের প্রতিষ্ঠাতা, ত্রিপোলির স্যুকে গিয়ে দেখেছেন মরসুম শেষে অপ্রয়োজনীয় পোশাক রাস্তায় বা নদীতে ফেলা হয়। এরিক বলেন, ‘আমি দুটি সমস্যা একসঙ্গে সমাধান করতে চেয়েছিলাম- অতিরিক্ত পোশাক নষ্ট হওয়া এবং বেকারত্ব।’
২০১৮ সালে এরিক ইমার্জেন্সি রুম বৈরুত শুরু করেন। তার নকশা প্রক্রিয়া পাওয়া উপকরণের উপর নির্ভর করে এবং প্রতিটি পণ্য অনন্য হয়।
লিন এল হাজ্জও একইভাবে কাজ করেন। তিনি ব্যাগ, পার্স, চার্ম এবং টুপি তৈরির জন্য বিভিন্ন কাপড়ের টুকরো সংগ্রহ করেন, যা প্রায়শই সূচিকর্ম করা বা মুদ্রিত কাপড় থেকে তৈরি হয়। লিন বলেন, ‘আমরা সবকিছু ব্যবহার করি- এবং স্ক্র্যাপ পর্যন্ত চার্মের স্টাফিং হিসেবে।’
এই আপসাইকেল পণ্যগুলো লেবাননে খুবই জনপ্রিয়। ‘মানুষ এখন টেকসইতা এবং পরিবেশের উপর ফ্যাশনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন।’
লিনের ব্যান্ড- সেকেন্ড বেস, ডিপো ভেনটে এবং ভিনটেজ ম্যাজিক বৈরুত বৈরুতের জনপ্রিয় থ্রিফ্ট শপ। এছাড়াও, ইনস্টাগ্রামে সেকেন্ড-হ্যান্ড পণ্যের একটি বড় সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে।
টেকসই ফ্যাশন কেবল স্টাইল নয়, বরং সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাক সরবরাহের একটি উপায় হিসেবেও কাজ করে। ওমর ইতানি লক্ষ্য করেন যে দানকৃত পোশাক প্রায়শই মানানসই না হওয়ায় ফেলে দেওয়া হয়। তাই তিনি লেবাননে পোশাক পুনর্বণ্টনের কাঠামোগত ও মর্যাদাপূর্ণ পদ্ধতি তৈরি করেছেন। সৌক এল খলাঞ্জ হল ফ্যাব্রিকএইডের কম দামের দোকানগুলোর একটি নেটওয়ার্ক, যেখানে প্রতিটি জিনিসের দাম প্রায় এক ডলার।
ওমর বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্যাব্রিকএইডের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। লেবাননের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের দাম জনসংখ্যার বড় অংশের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তাই সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাকের বিকল্পের চাহিদা কেবল বেড়েছে।’
ব্র্যান্ড ও সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি, লেবাননে টেকসই ফ্যাশনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালে সারাহ হার্মেজ এবং ক্যারোলিন সিমোনেলি চালু করেন ক্রিয়েটিভ স্পেস বৈরুত (সিএসবি), যা সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ফ্যাশন ডিজাইন শিক্ষা প্রদান করে। তিন বছরের এই প্রোগ্রাম সৃজনশীল প্রশিক্ষণ, ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং টেক্সটাইল ডিজাইন একত্রিত করে।
সারাহ বলেন, ‘ধীর এবং নীতিগত ফ্যাশনের গুরুত্ব আমাদের পাঠ্যক্রমের কেন্দ্রে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্বজুড়ে ডিজাইনারদের দানকৃত কাপড় ব্যবহার করে নতুন ডিজাইন তৈরি করতে শেখে।’
২০২৪ সালে শিক্ষার্থীরা আর্কাইভ স্টুডিও থেকে কাপড় আপসাইকেল করে নতুন নকশা তৈরি করেছে। তারা মুখি সিস্টার্স-এর সঙ্গে সহযোগিতায় ব্যাগ ও চার্মের লাইন তৈরি করেছে, যা টেকসইতা এবং কারুশিল্পের গল্প বলে।

