ইয়েমেনের রাজধানী সানায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে প্রায় দুই ডজন কর্মীকে আটক করেছে হুথি কর্তৃপক্ষ।
রোববার (১৯ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ।
ইয়েমেনে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর মুখপাত্র জিন আলম জানান, হুথি যোদ্ধারা শহরের হাদা জেলার কম্পাউন্ডে অভিযান চালিয়ে কর্মীদের আটক করে। আটক হওয়াদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন ইয়েমেনি নাগরিক ও ১৫ জন আন্তর্জাতিক কর্মী আছেন। এ ছাড়া আরও ১১ জন জাতিসংঘ কর্মীকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হুথিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হচ্ছে, যাতে এই ‘গুরুতর পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান’ হয় এবং সব কর্মীকে মুক্তি দিয়ে সংস্থার স্থাপনাগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ জাতিসংঘের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, হুথি যোদ্ধারা কম্পাউন্ডে থাকা কম্পিউটার, ফোন ও সার্ভারসহ সব যোগাযোগ সরঞ্জাম জব্দ করেছে। আটককৃতরা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), শিশু সংস্থা ইউনিসেফ এবং মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ)।
সানা, লোহিত সাগরের বন্দরনগরী হোদেইদাহ এবং উত্তরের সাদা প্রদেশসহ নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যক্রমে হুতিদের চাপ বাড়ানোর মধ্যেই এ অভিযান চালানো হলো। জাতিসংঘের হিসাবে, ইয়েমেনে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি কর্মীকে হুথিরা আটক করেছে।
হুথি বাহিনী এর আগে আটক জাতিসংঘ কর্মী এবং বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই বছরের শুরুর দিকে একই ধরনের ঘটনার পর জাতিসংঘ উত্তরাঞ্চলের সাদা প্রদেশে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করে এবং ইয়েমেনের শীর্ষ মানবিক সমন্বয়কারীকে রাজধানী সানা থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রশাসনিক কেন্দ্র আদেনে স্থানান্তর করে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আমাদের সহকর্মীদের নির্বিচারে আটকের অবসান দাবি করছি।’
এর আগে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে হুতি নেতা আবদেলমালেক আল-হুতি দাবি করেন, তার বাহিনী ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক গুপ্তচর চক্রগুলোর একটি’ ভেঙে দিয়েছে, যা নাকি ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও ইউনিসেফের সঙ্গে যুক্ত’। জবাবে ডুজারিক বলেন, ‘এই অভিযোগ বিপজ্জনক ও একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২১ জন জাতিসংঘ কর্মী এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার ২৩ জন বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মীকে ইয়েমেনে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
১০ বছর ধরে চলমান সংঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত ইয়েমেন ইতোমধ্যেই আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি। জাতিসংঘের হিসেবে, দেশটিতে কোটি কোটি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল, যা একে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর মানবিক সংকটের কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
