ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দিচ্ছে সিরিয়া। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ঐতিহাসিক বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মাথায় এ ঘোষণা এলো। সোমবার (১০ নভেম্বর) এক মার্কিন কর্মকর্তা এ কথা বলেছেন।
গত বছরের শেষ দিকে ইসলামপন্থি শারার নেতৃত্বে বিদ্রোহী বাহিনী সিরিয়ার দীর্ঘদিনের ‘স্বৈরশাসক’ বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সোমবার শারা হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৯৪৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি স্বাধীনতা লাভের পর এটি হোয়াইট হাউসে কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে ৪৩ বছর বয়সি শারার নাম বাদ দেওয়ার কয়েক দিন পরই তিনি ওয়াশিংটন সফরে যান। শারার নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) আগে আল-কায়েদার সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, শারার সফরকালে সিরিয়া ইসলামিক স্টেটবিরোধী বৈশ্বিক জোটে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর মাধ্যমে সিরিয়া এ জোটের ৯০তম সদস্য হবে। ওই কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমন্বয় আরও জোরদার করার লক্ষ্যে সিরিয়াকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করার সুযোগ দেওয়া হবে।
ট্রাম্প ও শারার ওই বৈঠকে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার অনুমতি ছিল না। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (শারা) অত্যন্ত শক্তিশালী এক নেতা। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে থাকা এক দেশ থেকে তিনি এসেছেন। তিনি নিজেও একজন সংগ্রামী মানুষ।’
পরে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘মানুষ বলে, তাঁর অতীতটা কঠিন ছিল। আমাদের সবারই তো অতীতটা কঠিন... আর সত্যি বলতে, যদি কারো অতীত কষ্টকর না হয়, তবে তাঁর সামনে এগোনোর সুযোগই থাকে না।’
ট্রাম্প বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর বৃহত্তর শান্তি পরিকল্পনার একটি ‘বড় অংশ’ সিরিয়া। তিনি আশা করছেন, এ শান্তি পরিকল্পনার আওতায় গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নাজুক যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
শারার সঙ্গে বৈঠকের পর নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দিয়েছেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি লিখেছেন, সিরিয়াকে একটি স্থিতিশীল ও সফল দেশ হিসেবে দেখাটা গোটা অঞ্চলের সব দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সিরিয়া তার দীর্ঘদিনের শত্রু ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করবে কি না, সে ব্যাপারে ট্রাম্প কিছু বলেননি।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর শারা মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেন, গোলান মালভূমি নিয়ে সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান বিরোধের কারণে দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা হওয়াটা কঠিন। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় পরিচালিত আলোচনাগুলো দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করতে পারে।
এদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, শারা ও ট্রাম্প দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কীভাবে দৃঢ় ও উন্নত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। দুই দেশের মধ্যকার কিছু অভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব তাদের ‘সহিংস’ অতীত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সাধারণ সিরীয় নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশি শক্তিগুলোর কাছে তারা নিজেদের সংস্কারপন্থি হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। এর আগে গত মে মাসে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় সৌদি আরবের রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেন শারা। তখন ৭৯ বছর বয়সি ট্রাম্প ৪৩ বছর বয়সি শারাকে ‘একজন যুবক ও আকর্ষণীয় ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

