ঢাকা রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫

স্বামীকে খাবারের সঙ্গে তিনবার বিষ খাইয়ে কোমায় পাঠিয়েছিলেন যে নারী

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
এরিন প্যাটারসন। ছবি- সংগৃহীত

সাধারণ পাস্তা বোলোনিজ, চিকেন কোরমা কিংবা সবজির রোল। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ এই খাবারগুলোই হতে পারত স্বামী সাইমন প্যাটারসনের মৃত্যুর কারণ। অস্ট্রেলিয়ার কুখ্যাত ‘মাশরুম খুনি’ এরিন প্যাটারসন তার শ্বশুরবাড়ির তিন সদস্যকে বিষাক্ত মাশরুম খাইয়ে হত্যার দায়ে ইতোমধ্যে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে এখন প্রকাশ্যে এসেছে স্বামীর ওপর একাধিকবার প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টার এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এরিন তার স্বামী সাইমনকে অন্তত তিনবার পরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। এই অভিযোগগুলো এতদিন আদালতের নির্দেশে গোপন রাখা হয়েছিল, যাতে এরিনের মূল বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত না হয়। কিন্তু বিচার শেষে সেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরই সামনে আসে এই হাড়হিম করা বিবরণ।

এনপিআর প্রাপ্ত আদালতের নথিতে সাইমন জানান, ইরিনের তৈরি খাবার খাওয়ার পর তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকও সাক্ষ্য দেন যে সাইমন তিনবার ‘মৃত্যুর কাছাকাছি অভিজ্ঞতা’ পেয়েছিলেন। এর মধ্যে একবার তিনি কোমায় চলে যান এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার অন্ত্রের কিছু অংশ অপসারণ করতে হয়।

সাইমন প্যাটারসন এক প্রাক-বিচার শুনানিতে জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালে একটি ক্যাম্পিং ট্রিপে এরিনের রান্না করা চিকেন কোরমা খাওয়ার পরেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ভাষায়, ‘প্রথমে আমার প্রচণ্ড গরম লাগতে শুরু করে, বিশেষ করে মাথায়। এরপর বমিভাব আসে এবং হঠাৎই আমি বমি করতে শুরু করি।’ এই অসুস্থতা এতটাই গুরুতর ছিল যে সাইমন কোমায় চলে যান এবং তার জীবন বাঁচাতে অন্ত্রের একটি অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাদ দিতে হয়।

সন্দেহের বীজ রোপিত হয়েছিল আগেই। সাইমন তার চিকিৎসক ক্রিস্টোফার ফোর্ডকে জানিয়েছিলেন, তার মনে হচ্ছিল এরিন তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ খাওয়াচ্ছেন। এই ভয় এতটাই তীব্র ছিল যে, এরিনের বানিয়ে আনা কুকিজ খেতেও তিনি আতঙ্কিত বোধ করতেন। চিকিৎসক ফোর্ডের মতে, ‘সাইমন কুকিজগুলো খেতে ভয় পাচ্ছিলেন, কারণ তার আশঙ্কা ছিল সেগুলোর মধ্যেও বিষ মেশানো থাকতে পারে।’ এরিন বেশ কয়েকবার ফোন করে সাইমন কুকিজগুলো খেয়েছে কি না তা জানতে চাওয়ায় এই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।

সাইমনের চাচাতো বোন রুথ ডুবোইস জানান, এই সন্দেহের কথা পরিবারের অন্য সদস্যদের না জানাতে পারার গভীর অনুশোচনা ছিল সাইমনের। তিনি বলেন, ‘সাইমন আমাদের বলতে চেয়েছিল যে তার অসুস্থতার পেছনে এরিনের হাত থাকতে পারে। সে এরিনের রান্না করা খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাদের পরিবারকে আগে সতর্ক করতে না পারায় সে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিল।’

সাইমনের ওপর এই কথিত হামলাগুলোর প্রায় এক বছর পরেই ঘটে সেই মর্মান্তিক ঘটনা, যা প্যাটারসনকে এনে দেয় ‘মাশরুম খুনি’ কুখ্যাতি। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্যাটারসন তার বাড়িতে এক মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। সেখানে গরুর মাংসের ওয়েলিংটনের সঙ্গে তিনি মারাত্মক ‘ডেথ ক্যাপ’ মাশরুম মিশিয়ে দেন। এই খাবার খেয়েই তার শ্বশুর ডন প্যাটারসন, শাশুড়ি গেইল প্যাটারসন এবং শাশুড়ির বোন হিদার উইলকিনসনের মৃত্যু হয়। হিদারের স্বামী ইয়ান উইলকিনসন গুরুতর অসুস্থ হলেও প্রাণে বেঁচে যান।

আশ্চর্যজনকভাবে, সেই মধ্যাহ্নভোজে সাইমনেরও আমন্ত্রণ ছিল, কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নেন। সেই সময় সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে সাইমনের সঙ্গে এরিনের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল।

এরিনের এই বিচার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের একটি শান্ত গ্রাম মরওয়েলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং অপরাধবিষয়ক উৎসাহীদের ভিড় জমে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিচারে এরিন দাবি করেন, তিনি ভুলবশত ভোজ্য মাশরুমের সঙ্গে বিষাক্ত ‘ডেথ ক্যাপ’ মাশরুম মিশিয়ে ফেলেছিলেন। তবে জুরি তার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং তাকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে।

আগামী ২৫ আগস্ট সাজা ঘোষণার জন্য এরিনকে আবার আদালতে তোলা হবে। সেখানেই নির্ধারিত হবে, কতদিন তাকে কারাগারের ভেতরে কাটাতে হবে। তার আইনি দল অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ২৮ দিন সময় পাবে।