ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

এবার পাকিস্তানে হামলা চালাবে নেতানিয়াহু

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ছবি- সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি সংঘাতে উত্তেজনা বেড়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। এরই মধ্যে মুসলিম বিশ্বের ইরান ও পাকিস্তানকে ঘিরে দেওয়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর  এক পুরোনো সাক্ষাৎকারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ইসলামি মিলিটাইজেশনকে কেন্দ্র করে ইরান ও পাকিস্তান এই অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং এ দুটি দেশই থাকতে পারে ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট।

নেতানিয়াহু বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় পাকিস্তানকে অত্যন্ত সাবধানে ও দূরদর্শিতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কী পথ বেছে নেবে।

তিনি বলেন, এখনই পাকিস্তানের উচিত একটা সুস্পষ্ট ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া। তারা কি ইরানে বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব বজায় রাখবে নাকি আত্মরক্ষায় আলাদা পথ নেবে।

অনেকেই বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে, তা আরও বিস্তার পেতে পারে এবং এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি পেতে পারে।

এদিকে, শুক্রবার (১৩ জুন) পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার জবাবে ইসরায়েলে ‘শত শত বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে ইরান

সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং ৯ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি হামলায় ‘গুরুতর আহত’ হয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে। তবে খামেনি সুস্থ আছেন, তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

এদিকে, এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে তার রক্তাক্ত ও কলুষিত হাত বিস্তার করেছে, আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আগের থেকেও স্পষ্টভাবে তার বর্বর স্বভাব প্রকাশ করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

তিনি বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য এক তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে এবং তা তাদের ভোগ করতেই হবে।

তিনি বলেন, ‘শত্রুর এই আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে ইনশাআল্লাহ, তাদের স্থলাভিষিক্তরা দ্রুতই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরায়েলের মতো শত্রুদের কখনো ছাড় দেবে না।’

এদিক, ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই হামলাটি উচ্চমানের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে এবং এর মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা। দুই ডজনেরও বেশি জেট বিমানের সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযান ছিল নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত এবং সুনির্দিষ্ট।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন, এই হামলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক সক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করা। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ এই অভিযান অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না আমরা মিশনটি সম্পন্ন করি।

হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল নিজের ভূখণ্ডেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দেশটির সামরিক মুখপাত্রের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় ভোর ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষামূলক কার্যক্রম, সমাবেশ এবং কর্মক্ষেত্রের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে- প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সব অঞ্চলকে পূর্ণ কার্যক্রম স্তর থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম স্তরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে, ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনী এই অভিযানে কোনো ভূমিকা পালন করেনি। 

এ ছাড়া ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে আবারও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।