অভিবাসী পাচারে সহায়তার অভিযোগে দুই ডজনের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। এই প্রথম পাচারের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দিল দেশটি। বুধভার (২৩ জুলাই) যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র অধিদপ্তর এ নির্দেশনা জারি করেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর উত্তর ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকাযোগে অভিবাসীর আগমন রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল বিপজ্জনকভাবে পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে পৌঁছায়। অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা প্রয়োগে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, বুধবার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার ফলে ওই ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্য সফর করতে পারবেন না, একইসঙ্গে সংস্থাগুলোর সম্পদ জব্দ করা হবে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে চীনের একটি ছোট নৌকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, মধ্যপ্রাচ্যে তথাকথিত ‘হাওলা’ (পরিবহনকারী) এবং বলকান ও উত্তর আফ্রিকায় থাকা গ্যাং লিডাররা।
সব মিলিয়ে ২০ জন ব্যক্তি, চারটি গ্যাং এবং একটি কোম্পানির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বুধবার যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তাদের মধ্যে ছিলেন ব্লেদার লালা ওরফে আলবেনিয়ান। তিনি একটি অপরাধী গোষ্ঠীর বেলজিয়ামের কার্যক্রম ‘নিয়ন্ত্রণ করতেন’। সাবেক পুলিশ অনুবাদক অ্যালেন বাসিল। যুক্তরাজ্য সরকার তাকে সার্বিয়ার বড় চোরাচালন চক্রের নেতা হিসেবে দাবি করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় শরণার্থীদের ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসের মধ্যে রাখতেন।
আরেক অভিযুক্ত ‘গ্যাং লিডার’ মোহাম্মদ তেতওয়ানি। তিনি সার্বিয়ার হরগোস এলাকায় একটি অভিবাসী শিবির পরিচালনা করতেন। লন্ডনে তাকে ‘স্বঘোষিত হরগোসের রাজা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, তেতওয়ানি একটি মানব-পাচারকারী চক্রের নেতৃত্ব দিতেন, যা বলকান অঞ্চলের অন্যতম সহিংস চক্র হিসেবে পরিচিত। এই গ্যাং অভিবাসীদের মুক্তিপণের জন্য আটকিয়ে রাখত এবং যারা ফি দিতে পারত না, বিশেষ করে নারী অভিবাসীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজে ইরাকভিত্তিক সাতজন মানব-পাচারকারী এবং আরও তিনজন ব্যক্তিকে টার্গেট করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ‘হাওলা’ নামে পরিচিত প্রাচীন এক ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তা করেছেন। এই ব্যবস্থায় কোনো আনুষ্ঠানিক আর্থিক লেনদেন ছাড়াই নগদ অর্থ স্থানান্তর সম্ভব হয়।
উত্তর আফ্রিকা ও বলকান অঞ্চলের গ্যাং ও তাদের নেতাদের দমন করার পাশাপাশি, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে চীনা কোম্পানি ওয়েইহাই ইয়ামার আউটডোর প্রোডাক্ট কোং-এর ওপরও। অভিযোগ, তারা ‘মানব পাচারের উদ্দেশ্যে সরাসরি’ অনলাইনে ছোট নৌকার বিজ্ঞাপন দিয়েছিল।
পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি এটিকে ‘যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ অভিবাসন অপরাধ দমনে সরকারের জন্য এক যুগান্তকারী মুহূর্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপ থেকে এশিয়া সবখানেই আমরা মানব-পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়ছি, যারা অনিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহ দিচ্ছে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই হোক না কেন, তাদের আমরা টার্গেট করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব চক্র লাভের আশায় মানুষকে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের প্রতি আমার বার্তা আমরা জানি তোমরা কারা। আর তোমাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আমরা বিশ্বজুড়ে আমাদের মিত্রদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করব।’

 
                             
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন