একদিকে সমুদ্র, অন্যদিকে শহরের অলিগলিতে শৈল্পিক ছোঁয়া। ক্যালিফর্নিয়ার মধ্য উপকূলে অবস্থিত ছোট্ট শহরটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তবে এই শহরে নারীদের জন্য রয়েছে কড়া নিয়ম-নীতি।
পছন্দমতো জুতো পরে সবসময় রাস্তাঘাটে বেরোতে পারেন না নারীরা। প্রশাসনের নজরবন্দি তারা। যদি নিয়ম ভেঙে নারীরা অন্য জুতো পরতে চান, তাহলে নিতে হয় প্রশাসনের অনুমতি।
শহরের নাম কার্মেল বাই দ্য সি। পাথুরে রাস্তাঘাট, শান্ত পরিবেশের এই শহরের কোনায় কোনায় ফুটে উঠেছে ইউরোপীয় গ্রামের শৈল্পিক ঐতিহ্য। কিন্তু সেই শহরে জালের মতো ছেয়ে রয়েছে অসম পাথুরে রাস্তা।
২০২০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কার্মেল শহরের জনসংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২২০ জন। এই শহরের নারী বাসিন্দাদের পাশাপাশি কড়া নিয়ম রয়েছে মহিলা পর্যটকদের জন্যও। নারীদের কারও এই শহরে হিল পরে হাঁটার অনুমতি নেই।
নারীরা তাদের পছন্দমতো জুতো পরতে পারেন, তবে তার জন্য মেনে চলতে হবে বিশেষ শর্ত। হিল ছাড়া জুতো পরতে কোনও বাধা নেই। কিন্তু হিল থাকলেই সমস্যা।
কার্মেল শহরের রাস্তাঘাট পাথরের তৈরি। এমনকি, রাস্তাঘাট সব জায়গায় সমতলও নয়। উঁচু-নিচু পাথুরে রাস্তায় হিল পরে হাঁটলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কার্মেল শহরের প্রশাসন।
১৯৬৩ সালে নারীদের সুবিধার জন্য কার্মেল শহরে একটি আইন পাশ হয়। আইন অনুযায়ী, কোনো নারী সর্বাধিক দুই ইঞ্চি হিল পরে হাঁটাচলা করতে পারেন। কিন্তু হিলের দৈর্ঘ্য তার চেয়ে বেশি হলেই সিটি হলো থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে।
সিটি হলে অনুমতি নেওয়ার সময় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানাতে হবে যে, সেই মহিলা কত ইঞ্চির হিল পরে রাস্তায় হাঁটবেন। কম সময়ের মধ্যে খুব সহজেই এই অনুমতি পাওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যে প্রশাসনের বিশেষ শর্ত রয়েছে।
প্রশাসনের দাবি, যে নারীরা শহরের নিয়ম ভেঙে বিশেষ অনুমতি নিয়ে হিল পরে রাস্তাঘাটে ঘুরবেন, তাদের রাস্তাঘাটে চলাফেরার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসন দায় নেবে না। দায়িত্ব ওই নারীদেরই।
হিল পরলে প্রশাসনের পক্ষে পাওয়া অনুমতিপত্র নিয়ে এই নারীকে সবসময় যাতায়াত করতে হবে কার্মেল শহরে। শুধু রাস্তাঘাটেই নয়, এই শহরের ফুটপাথেও হিল পরে হাঁটা যায় না।
প্রশাসনের দাবি, কার্মেল শহরের সব রাস্তা একই রকম। নারীদের হিল পরে চলার সুবিধার জন্য শহরজুড়ে রাস্তাঘাটের পুনর্নির্মাণ অর্থহীন এবং ব্যয়সাপেক্ষ বটে।
তবে হিল পরার অনুমতিপত্র এত সহজে কেন পাওয়া যায়? সেই নিয়ম-কানুনও জটিল হতে পারত। কিন্তু প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে যে, তারা নারীদের ফ্যাশনবোধ নিয়ে কখনও প্রশ্ন তোলেননি। বরং নারীদের সতর্ক করতে চেয়েছেন।
কার্মেল শহরটি হেঁটে ঘোরার পক্ষেই সুবিধাজনক। বুটিক হোটেলের পাশাপাশি এই শহরের অলিগলিতে রয়েছে আর্ট গ্যালারি। তাছাড়া সমুদ্রসৈকতে সময় কাটাতে পারেন পর্যটকেরা।
কার্মেল শহরের নারী নাগরিকেরা এই নিয়মের সঙ্গে অবগত। তবে নারী পর্যটকদের জন্য মাঝেমধ্যেই প্রশাসনের পক্ষে অনুমতিপত্র দিতে হয়। কিছু সময় পর নারীরা যখন হিল পরে হাঁটতে পারেন না, তখন নিজেরাই জুতো খুলে হাতে নিয়ে ফেলেন অথবা হিল ছাড়া অন্য কোনো জুতো পরে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেন।