মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন মাস্ক।
তিনি দলের সম্ভাব্য নাম দিয়েছেন ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’। শনিবার (৭ জুন) এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্পষ্ট বলেন, মাস্কের সঙ্গে তার আর কোনো সম্পর্ক নেই এবং সেটি আবার ফিরিয়ে আনার ইচ্ছাও নেই তার।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ধরে নিচ্ছি, হ্যাঁ (সম্পর্ক শেষ)।’ এরপর জানতে চাওয়া হয়, তিনি কী সেই সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে চান? সোজাসাপ্টা উত্তর ট্রাম্পের - ‘না।’
ট্রাম্পের প্রচারণায় কয়েক শ’ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন মাস্ক। এর বদলে হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ‘বিগ বিউটিফুল কর ও ব্যয় বিল’ নিয়ে মাস্কের প্রকাশ্য সমালোচনার পর তাদের মধ্যে দূরত্ব চরমে ওঠে। অবশেষে ১২৯ দিন পর সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডোজ) থেকে পদত্যাগ করেন মাস্ক।
এদিকে ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভান্স বলেন, মাস্ক এখন ‘এতটাই পারমাণবিক’ হয়ে গেছেন যে রিপাবলিকান পার্টিতে তাকে আর হয়তো জায়গা দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের ওপর এভাবে আক্রমণ করা মাস্কের বড় ভুল।’
ট্রাম্প একাধিকবার সাংবাদিকদের কাছে মাস্কের আচরণে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেন। পাল্টা জবাবে মাস্ক এক্সে পোস্ট দিয়ে বলেন, তাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততেই পারতেন না।
এমনকি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিতর্কিত অর্থলগ্নিকারী জেফরি এপস্টাইনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও তোলেন মাস্ক। যদিও পরে সেই পোস্টটি মুছে ফেলেন এবং এপস্টাইনের আইনজীবীরা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে মাস্ককে ‘পাগল’ বলে মন্তব্য করেন এবং মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে থাকা সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন।
এরপর এনবিসি-র সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তিনি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়কে অসম্মান করেছেন। এটা খুব খারাপ। কারণ, আপনি প্রেসিডেন্টের অফিসকে অসম্মান করতে পারেন না।’
এই টানাপোড়েনের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় আসে মাস্কের রাজনৈতিক উচ্চাশা। গত বৃহস্পতিবার এক্সে একটি জরিপ চালান মাস্ক, যেখানে প্রশ্ন ছিল - ‘যুক্তরাষ্ট্রে জনগণকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল দরকার কি না?’
সেখানে ৮০ শতাংশ ভোটার ‘হ্যাঁ’ বলেন। পরদিন মাস্ক লেখেন, ‘জনগণ রায় দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি পার্টির দরকার, যারা ৮০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে।’ এরপর তিনি দলটির সম্ভাব্য নাম প্রকাশ করেন - ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’।
মাস্ক এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দল গঠনের ঘোষণা দেননি। তবে ট্রাম্পপন্থীদের সঙ্গে তার সম্পর্কচ্ছেদ এবং নিজস্ব রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ার ইঙ্গিতে আমেরিকার রাজনীতিতে বড় ধরনের রদবদলের আভাস দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্পও এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি মাস্ক ডেমোক্রেটদের পক্ষে দাঁড়ান, তবে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :