ঢাকা বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫

কেন বিধ্বস্ত হয়েছিল টাইটান সাবমেরিন, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ১১:০৮ পিএম
বিধ্বস্ত হওয়া টাইটান সাবমেরিন। ছবি- সংগৃহীত

দুই বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে বিধ্বস্ত হওয়া টাইটান সাবমেরিন দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড। ৩৩৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, যা শুধু ওশানগেট নামের কোম্পানিটির দায়িত্বহীনতা নয়, বরং গোটা গভীর সমুদ্র পর্যটন উদ্যোগকেই নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সাবমেরিনটির নকশায় মারাত্মক গঠনগত ত্রুটি ছিল এবং ওশানগেট কর্তৃপক্ষ তা জেনেও নিরাপত্তা উপেক্ষা করে সাবমেরিন চালনা চালিয়ে গেছে। নির্মাণে ব্যবহৃত কার্বন ফাইবার উপাদান সময়ের সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ছিল এবং প্রতিষ্ঠানটি বিষয়টি জানার পরও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ না করে যাত্রীবাহী অভিযান অব্যাহত রাখে। কোম্পানিটির অভ্যন্তরে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশকারীদের চাকরি হারানোর ভয় দেখানো হতো বলেও উল্লেখ রয়েছে।

২০২৩ সালের জুনে টাইটান সাবমেরিনটি ডুবে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। এতে থাকা পাঁচজন সবাই নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ, ব্রিটিশ ধনকুবের হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে সুলেমান এবং ফরাসি ডুবুরি পল-হেনরি নার্জিওলেট। তদন্তে উঠে এসেছে, দুর্ঘটনার এক বছর আগেই সাবমেরিনটির গায়ে ফাটল ধরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এমনকি ২০২২ সালের জুনে এর ৮০তম ডাইভে যাত্রীরা এক ধরনের ‘বিস্ফোরণের শব্দ’ শুনেছিলেন, যা পরবর্তী বিশ্লেষণে কার্বন ফাইবারের স্তর বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফল বলেই চিহ্নিত হয়েছে।

মার্কিন কোস্ট গার্ডের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার কেটি উইলিয়ামস বলেন, ‘৮০তম ডাইভই ছিল পতনের শুরু। এর পর থেকে যারা টাইটানে উঠেছে, তারা সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠেছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওশানগেট বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক ও গণমাধ্যমে নিজস্ব ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে সরকারি নজরদারি এড়িয়ে চলে। ২০২৩ সালের শেষ অভিযানে তারা তৃতীয় পক্ষের কোনো পর্যালোচনা ছাড়াই যাত্রা শুরু করেছিল। এই গাফিলতির ফলে নিরাপত্তা পর্যালোচনা, তথ্য বিশ্লেষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়।

এই তদন্তপ্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে গভীর সমুদ্র অভিযানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বেসরকারি উদ্যোগগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওশানগেটের মতো প্রতিষ্ঠানের ‘চালাক চাতুরির কৌশল’ ভবিষ্যতের যাত্রীদের জন্য ভয়ংকর উদাহরণ হয়ে থাকবে।

তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, রয়টার্স, এপি, সিএনএন