ঢাকা শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিশ্ব দরবারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির আহ্বান মাহমুদ আব্বাসের

শাওন সোলায়মান, নিউইয়র্ক থেকে
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৫:৪১ পিএম
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্ব দরবারে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে এ আহ্বান জানান তিনি। এবারের অধিবেশনে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে ভাষণ দেন আব্বাস।

তিনি বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে তার জনগণ গণহত্যা, ধ্বংস, অনাহার ও বাস্তুচ্যুতি সহ্য করছে। প্রায় দুই বছরের লড়াইয়ে দুই লাখ ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও প্রবীণ। অবরোধের কারণে দুই মিলিয়ন মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল, চার্চ, মসজিদ ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।’

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘ইসরায়েল যা চালিয়ে যাচ্ছে তা কেবল আগ্রাসন নয়, এটি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।’ তিনি একে ‘বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর মানবিক বিপর্যয়ের সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায়গুলোর একটি’ বলে অভিহিত করেন।

আব্বাস পশ্চিম তীরে বাড়তে থাকা বসতি স্থাপন ও দখলদার সহিংসতার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ কৌশলের মাধ্যমে ইসরায়েলি ভূখণ্ড সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা পশ্চিম তীরকে বিভক্ত করছে, দখলকৃত জেরুজালেমকে বিচ্ছিন্ন করছে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে ধ্বংস করছে।

তিনি আরও জানান, জেরুজালেম, হেবরন ও গাজার ধর্মীয় স্থানগুলোও রক্ষা পায়নি। মসজিদ, চার্চ ও কবরস্থান পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে।

আব্বাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এই কর্মকাণ্ড ফিলিস্তিনি জনগণ কিংবা তাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির ন্যায্য সংগ্রামকে প্রতিনিধিত্ব করে না।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘গাজা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এক রাষ্ট্র, এক আইন ও একক নিরাপত্তা বাহিনী নীতির ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সেখানকার শাসন ও নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।’

বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সশস্ত্র রাষ্ট্র চাই না।’ তার দৃষ্টিভঙ্গি—আইনের শাসন, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং যুব ও নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তিতে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেসিডেন্ট আব্বাস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ফিলিস্তিন বিষয়ে জাতিসংঘের এক হাজারেরও বেশি প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি, যদিও ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর থেকেই শান্তি চুক্তি গ্রহণ করেছে এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’

তার অভিযোগ, ইসরায়েল ‘পদ্ধতিগতভাবে’ সেই চুক্তিকে দুর্বল করেছে, অথচ ফিলিস্তিনিরা তাদের অঙ্গীকারে অটল থেকেছে, সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করেছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট নিউইয়র্কে গত সপ্তাহে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের ফলাফলকে স্বাগত জানান এবং ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দানকারী ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তিনি অন্য দেশগুলোকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে এবং পূর্ণাঙ্গ জাতিসংঘ সদস্যপদে সমর্থন জানাতে আহ্বান জানান।

আব্বাস বলেন, ‘ফিলিস্তিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ফ্রান্স, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে মিলে গৃহীত শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রস্তুত।’ তিনি যোগ করেন, ‘ন্যায়বিচার ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়, আর ফিলিস্তিন মুক্ত না হলে ন্যায়বিচার আসবে না।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা কখনোই তাদের মাতৃভূমি বা অধিকার ছাড়বে না। কষ্ট যত দীর্ঘই হোক না কেন, তা আমাদের বেঁচে থাকার ও টিকে থাকার ইচ্ছাশক্তিকে দমাতে পারবে না। স্বাধীনতার ভোর আসবেই, আর মর্যাদা ও দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে ফিলিস্তিনের পতাকা আমাদের আকাশে উড়বে।’