ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন: গণছাঁটাইয়ে কর্মহীন হতে পারেন ৭ লাখের বেশি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ১০:২৯ এএম
যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন। ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের সম্ভাব্য শাটডাউন শুরু হলে দেশটিতে দেখা দিতে পারে বড় ধরনের কর্মসংস্থান সংকট। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিতে কর্মরত সাত লাখেরও বেশি কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে ছুটিতে পাঠানো হতে পারে।ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে কংগ্রেসে সমঝোতা না হওয়ায় এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ কর্মীদের ওপর। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজেট অনুমোদন না হয়, তবে সরকার তার অ-অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রমগুলো স্থগিত করতে বাধ্য হবে, যার ফলে শুরু হতে পারে এই গণছাঁটাই।

অ-অত্যাবশ্যকীয় বিভাগের এই বিপুল সংখ্যক কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হলেও তারা সাধারণত কোনো বেতন পান না। তবে, পরবর্তী সময়ে শাটডাউন শেষ হলে আইন পাসের মাধ্যমে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের শাটডাউন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে তাৎক্ষণিক মন্দা সৃষ্টি করতে পারে, যা সরকারি কর্মীদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করবে এবং বিভিন্ন সরকারি সেবায় ব্যাঘাত ঘটাবে। এই মুহূর্তে কংগ্রেসে দ্রুত সমঝোতার মাধ্যমেই কেবল এই বিশাল সংখ্যক কর্মীকে ছুটিতে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

আইনপ্রণেতারা সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরকারি এই শাটডাউন বা অচলাবস্থার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছেন।বুধবার (০১ অক্টোবর) বিকেলে হোয়াইট হাউজের এক ব্রিফিংয়ে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটের সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের উপস্থিত হওয়া ছিল বিরল ঘটনা। এই অচলাবস্থা নিয়ে ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক খেলা খেলার অভিযোগ করেছেন ভ্যান্স।

বিবিসির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সরকারি সংস্থা কংগ্রেস থেকে অনুমোদিত বার্ষিক তহবিলের ওপর নির্ভর করে। প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন এই সংস্থাগুলো তাদের অনুরোধ জমা দেয়, যা কংগ্রেসকে পাস করতে হয় এবং প্রেসিডেন্টকে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য বাজেট আইনে স্বাক্ষর করতে হয়। পহেলা অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার আগে যদি কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো না যায়, তাহলে শাটডাউন তৈরি হয়। এর ফলে অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, অনেক জরুরি সেবাও বিঘ্নিত হয়।

এরই মধ্যে লেভিট জানিয়েছেন, শাটডাউনের কারণে দুই দিনের মধ্যেই ব্যাপকহারে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা শুরু হবে। ডেমোক্রেটরা আমাদের এই পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।

অন্যদিকে সরকার চালু রাখতে একটি অস্থায়ী স্টপ গ্যাপ বা বিরতি ব্যবস্থা চায় রিপাবলিকানরা, যেটি মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এবং বর্তমান হারে তহবিল দেবে। এর মানে হলো, বাজেট নিয়ে সমঝোতার আগ পর্যন্ত সরকারের ব্যয় যাতে চালু থাকে তার একটা ব্যবস্থা। নিম্ন আয়ের আমেরিকানদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার সুরক্ষায় সমঝোতার জন্য সরকারকে এই শাটডাউনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডেমোক্রেটরা।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, হেলথকেয়ার বেনিফিটগুলো প্রধান অগ্রাধিকার নয়, বরং সরকার চালু রাখাই গুরুত্বপূর্ণ রিপাবলিকানদের জন্য। তবে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ থাকার পরও অর্থায়ন বিল পাস করতে তারা ৬০টি ভোট পায়নি।

শাটডাউনের ফলে স্বল্প সময়ের জন্য সীমান্তের এজেন্ট ও সেনাবাহিনীসহ অপরিহার্য কর্মীদের বেতন ছাড়াই কাজ করতে হবে। কিন্তু অপরিহার্য নয় এমন সরকারি কর্মীদের বিনা বেতনের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। বিশ্লেষকরা ধারণা, এই শাটডাউন বা অচলাবস্থা ২০১৮ সালের তুলনায় অনেক বড় হবে যখন কংগ্রেস কিছু তহবিল পাস করেছিল। তারা অনুমান করছেন, প্রায় ৪০ শতাংশ ফেডারেল কর্মী বা প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষকে সাময়িকভাবে ছুটিতে পাঠানো হবে। কিছু কর্মীকে বুধবার ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল কর্মীদের স্থায়ী ছাঁটাইয়েরও হুমকি দিয়েছে।

ইতোমধ্যেই ইউএস আইন অননুমোদিত অভিবাসীদের ফেডারেল ভর্তুকিযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আর শুক্রবার রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত স্বল্পমেয়াদী অর্থায়নের বিলের ওপর আরেকবার ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।