রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী খুন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই খুন

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী খুন  ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকেই খুন

বৈদ্যুতিক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দে¦র জেরে রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই এলাকায় বিদ্যুতের তামার তার ও সাদা তারের ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ ছিল সোহাগ ওরফে লাল চাঁদের কাছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তা নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া ছিলেন মাহমুদুল হাসান মহিন ও সারোয়ার হোসেন টিটু নামে আরও দুজন। তারা ওই বাণিজ্যের ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন। এর জেরেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরই জেরে প্রকাশ্যে ইট-পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী সোহাগকে। এ ঘটনায় মাহমুদুল হাসান মাহিন ও তারেক রহমান রবিনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মহিন, টিটুসহ অভিযুক্তরা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। 
গত বুধবার পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফটকে এই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলে। প্রকাশ্যে এমন হত্যাযজ্ঞে সোহাগকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ। নৃশংস এই হত্যাকা-ের দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের ভেতরে এক যুবকের অর্ধমৃত দেহ পড়ে আছে। পাঁচ-ছয়জন যুবক তার শরীরে একের পর এক ইট-পাথর মেরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করছেন। এরপর সেই যুবকের রক্তাক্ত দেহ ফটকের ভেতর থেকে টেনে বের করে মাঝ রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন দুই যুবক। কালো প্যান্ট পরা খালি গায়ের এক তরুণ তার গালে চড় মারছেন। কালো গেঞ্জি পরা আরেকজন এসে ওই ব্যক্তির বুকের ওপর লাফাচ্ছেন। আর এ ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখছে অর্ধশতাধিক মানুষ। কিন্তু এগিয়ে যায়নি। 
ঘটনার দুই দিন পর সেখানে গিয়ে স্থানীদের ও পরিবার সূত্রে জানা গেল, ব্যবসার ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে। তিনি মিটফোর্ড রোডের ৪ নম্বর রজনী বোস লেনের ভাঙারিপট্টির সোহানা মেটালের মালিক। তিনি অ্যালুমিনিয়াম সিট, তামা, পিতল, দস্তা, শিসা, কাস্টিং কেনাবেচা করেন। এই ব্যবসা নিয়েই পূর্বপরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্ব মীমাংসা করতে বুধবার বিকালে সোহাগকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়।
নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন সোহাগ। অনেক বছর ধরেই ওই এলাকায় ব্যবসা করছিলেন। চার-পাঁচ বছর আগে তিনি ওই দোকান নিয়ে নিজে ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক মাস ধরে তার ব্যবসায় একজন সহযোগী নেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাকে গত তিন-চার দিন হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন রাতে তার দোকানে গুলাগুলিও হয়। পরদিন বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। তারপর কয়েকজন মিলে তাকে হত্যা করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ওই দিন খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। অভিযুক্তরা সবাই শনাক্ত। র‌্যাব-পুলিশ এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। 
হত্যার নেপথ্যের কারণ কীÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে হত্যাকা- ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 
গতকাল শুক্রবার বিকেলে মিটফোর্ড রোডে গিয়ে দেখা যায়, রোডের একপাশের ৪ নম্বর রজনী বোস লেনের ভাঙারিপট্টি। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সব দোকানই বন্ধ। গলির মাঝখানে ডান পাশেই সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান। সেই দোকানের মালিক সোহাগ। তার কয়েকশ গজ দূরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটক। ফটকের ভেতরে কয়েক মিটার দূরেই তাকে মারধর করে অচেতন করা হয়। এরপর সেখানে ইট-পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চত করা হয়। সেখান থেকে টেনে রাস্তায় নিয়ে আসেন হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহাগকে গলির ওই দিক থেকেই মারধর শুরু করা হয়। মারতে মারতে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের ভেতরে নেওয়া হয়। সোহাগ বাঁচার অনেক চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা।
স্থানীয় এক দোকানি বলেন, তারা সবাই এখানকার। সোহাগ নিজেও বিএনপির রাজনীতি করতেন। তার পরিচিত লোকজনই এই হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। তারা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
রজনী বোস লেনের ভাঙারিপট্টির এক দোকান কর্মচারী বলেন, অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসার পার্সেন্টেজের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের কারণেই হত্যাকা- ঘটেছে। দুই গ্রুপই বিএনপির রাজনীতি করে।
এ ঘটনায় ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম। 
মামলার এজাহারে বলা হয়, সোহাগ দীর্ঘদিন ওই এলাকায় ব্যবসা করায় ব্যাবসায়িক বিভিন্ন বিষয়সহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আসামিদের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে তারা সোহাগের গুদাম তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। সেই সঙ্গে তাকে এলাকাছাড়া করতে নানা রকম ভয় দেখিয়ে আসছিলেন। এরপর বুধবার বিকাল পৌনে ৬টার দিকে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সোহাগের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করেন। তাকে মারধর করতে করতে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের ভেতরে নিয়ে যান। একপর্যায়ে রড, লাঠি, সিমেন্টের ব্লক বা ইট দিয়ে আঘাত করেন। মারতে মারতে তাকে বিবস্ত্র করে ফেলেন। একপর্যায়ে সোহাগ নিস্তেজ হয়ে ড্রেনের পাশে লুটিয়ে পড়েন। তখন তার নিথর দেহ টেনে হাসপাতালের সামনের রাস্তায় নিয়ে যান তারা।
আসামিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিন (২২) ছাড়াও রয়েছেÑ সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!