ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির কারণে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষিব্যবস্থা। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় দেশের ২১ জেলার ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এসব ফসল ও ফলের মধ্যে আছে আউশ, আমনের বীজতলা, বোনা আমন, পাট, শাকসবজি, ফলের বাগান, পান ও তরমুজ। গত বৃহস্পতিবার রাতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং গতকাল শুক্রবার জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলোÑ কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও শরীয়তপুর। এসব জেলার ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল প্রাথমিকভাবে পানিতে ডুবে গেছে।
সবচেয়ে বেশি কুমিল্লা জেলার ফসলি জমি পানিতে ডুবেছে। এর পরিমাণ ১১ হাজার ৫৯০ হেক্টর। ডুবে যাওয়া ফসলের মধ্যে আছে আউশ, আমন, শাকসবজি, মরিচ ও আখ। নোয়াখালী জেলার ৭ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল যেমনÑ আউশ, আমন, শাকসবজি, মরিচ ও তরমুজ পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া ফেনীর ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২১ জেলার ৪৪ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমির আউশ, ১৪ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ১৩৫ হেক্টর জমির পাট, ৯ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমির শাকসবজি, ১১৪ হেক্টর জমির কলা, ২৯৩ হেক্টর জমির পেঁপে, ৩৮৭ হেক্টর জমির পান, ২৯৭ হেক্টর জমির বোনা আমন আবাদ, ১০৪ হেক্টর জমির মরিচ, ২৯৩ হেক্টর জমির পেঁপে, ২৮১ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে।
ফেনীতে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত
ফেনীতে বন্যায় নতুন করে আরও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এসব গ্রাম প্লাবিত হয় বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। নতুন করে প্লাবিত হওয়া গ্রামের মধ্যে চারটি ফেনী সদর উপজেলা, পাঁচটি ছাগলনাইয়া উপজেলা ও একটি দাগনভূঞা উপজেলায়। তবে সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরামে বন্যার পানি কিছুটা কমেছে।
এদিকে বন্যার কারণে পাঁচ উপজেলায় এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফেনী-ফুলগাজী ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ছোট আকারের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৯ হাজার ২০০ বাসিন্দা অবস্থান করছেন। বুধবার রাত পর্যন্ত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারী, অসুস্থসহ ১৮ জনকে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার করেছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বাসিন্দারা জানান, বুধবার বিকেল থেকে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সন্ধ্যার পর দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশেও বন্যার পানি বেড়ে যায়। এতে নতুন করে প্লাবিত হয় ফেনী সদরের ফাজিলপুর ইউনিয়নের দুটি ও মোটবি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম; ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম এবং দাগনভূঞা উপজেলার একটি গ্রাম।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার নিশ্চিতের পাশাপাশি বন্যায় জনদুর্ভোগ কমাতে সব অংশীজনকে নিয়ে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
নোয়াখালীতে বৃষ্টি কমলেও বেড়েছে ভোগান্তি
নোয়াখালীতে বৃষ্টির পরিমাণ কমায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে পানি ধীরগতিতে নামছে। এ কারণে বৃষ্টি কমলেও শহরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমেনি। জেলা শহর মাইজদীসহ বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা জজ আদালত সড়ক, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা, দরগাবাড়ি, সরকারি মহিলা কলেজ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এলাকায় জলাবদ্ধতা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। তবে এখনো বেশির ভাগ সড়কে পানি আছে। এসব পানি মাড়িয়ে নিত্যদিনের কাজ করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা বের হচ্ছেন। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙেছে। এতে গাড়ি চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দরগাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রোজিনা আক্তার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে তিন দিন ঘর থেকে বের হতে পারেননি। অল্প বৃষ্টিতে তাদের এলাকায় পানি জমে। পানিও নিষ্কাশন হয়নি। এর ফলে এলাকার শতাধিক পরিবার কার্যত পানিবন্দি অবস্থায় আছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো. আজরুল ইসলাম বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এখন বৃষ্টিপাত কিছুটা কমবে। তবে বর্ষায় স্বাভাবিক যে বৃষ্টিপাত হয়, সেটি হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে; যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ২০৮ মিলিমিটার। তিনি বলেন, বৃষ্টি কমলেও জলাবদ্ধতা কমেনি। তাদের কার্যালয়ের সামনেও হাঁটুপানি।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জালাল উদ্দীন বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পানি চলাচলের পথগুলো সচল করে দিয়েছেন। দ্রুতই জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
আপনার মতামত লিখুন :