প্রতিবছর ঈদ এলেই সরগরম হয়ে ওঠে দেশের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি। সারা বছর প্রেক্ষাগৃহে খরা গেলেও ঈদে প্রেক্ষাগৃহে দেখা যায় দর্শক পদচারণা। প্রতি বছরের মতো ঈদুল আজহায়ও মুক্তি পাচ্ছে অর্ধডজন সিনেমা। মুক্তির মিছিলে থাকা সিনেমাগুলো হচ্ছে- রায়হান রাফি পরিচালিত ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খান, সাবিলা নূর, জয়া আহসানের বহুল আলোচিত সিনেমা ‘তাণ্ডব’, মিঠু খান পরিচালিত আরিফিন শুভ, মন্দিরা চক্রবর্তীর ‘নীলচক্র’, সঞ্জয় সমদ্দার পরিচালিত শরিফুল রাজ, মোশাররফ করিম, তাসনিয়া ফারিণের ‘ইনসাফ’, সানী সানোয়ার পরিচালিত আজমেরী হক বাঁধনের ‘এশা মার্ডার’, আলোক হাসান পরিচালিত আদর আজাদ, পূজা চেরির ‘টগর’, ফরহাদ হোসাইন পরিচালিত শ্যামল মাওলা অভিনীত ‘নাদান’, তানিম নূর পরিচালিত চঞ্চল চৌধুরী, জাহিদ হাসানের ‘উৎসব’, রাকিবুল ইসলাম রাকিব পরিচালিত রাসেল মিয়া, জলির ‘গোয়ার’, রাখাল সবুজ পরিচালিত রোশান ও বুবলীর ‘সরদার বাড়ির খেলা’ (পূর্বের নাম ‘পুলসিরাত’) ও অনিক বিশ্বাস পরিচালিত নিরব হোসেন ও ইয়ামিক হক ববি অভিনীত ‘শিরোনাম’।
‘উৎসব’ সিনেমাটি ওটিটির জন্য নির্মিত হলেও ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। ঈদ সামনে রেখে ‘নাদান’, ‘শিরোনাম’, ‘গোয়ার’ ও ‘সরদার বাড়ির খেলা’ (পূর্বের নাম ‘পুলসিরাত’) নামের সিনেমা চারটি মুক্তির মিছিলে থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
‘তুফান’ সাফল্যের পর রায়হান রাফি ও শাকিব খান নিয়ে আসছেন ‘তাণ্ডব’। অ্যাকশন ধাঁচের এ সিনেমাটি মাল্টিপ্লেক্স থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিন সবখানে রমরমা ব্যবসা করবে এমনটা মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’র পর ‘নীলচক্র’ নিয়ে সিনেমা হলে আসছেন ‘মুজিব’ নায়ক আরিফিন শুভ। অনেকের প্রত্যাশা, দুই বছর পর সিনেমা হলে এ সিনেমার মাধ্যমে আরিফিন শুভ কামব্যাক করবেন।
সঞ্জয় সমদ্দার পরিচালিত ‘ইনসাফ’ অ্যাকশন ধাঁচের সিনেমা। এর মাধ্যমে মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমাতে অভিষিক্ত হচ্ছেন তাসনিয়া ফারিণ। একটি খুনের ঘটনা নিয়ে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘এশা মার্ডার’। ‘মিশন এক্সট্রিম’ ও ‘ব্ল্যাক ওয়ার’র পর এ সিনেমা নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে আসছেন সানী সানোয়ার। অ্যাকশন ধাঁচের ‘টগর’ দিয়ে রুপালি পর্দায় প্রথম মুক্তি পেতে যাচ্ছে নাট্যনির্মাতা আলোক হাসান পরিচালিত প্রথম সিনেমা।
‘কাইজার’ ওয়েব সিরিজ বানিয়ে সুনাম অর্জন করা তানিম নূর পরিচালিত ‘উৎসব’ সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন দেশের নামকরা শিল্পীরা। সিনেমাটিকে ‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’ বলে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাকিব।
বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকাই সিনেমায় একক রাজত্ব করছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। ২০০৭ সালের পর থেকে এ ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব যেন একাই কাঁধে বয়ে আছেন তিনি। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা দেশের চলচ্চিত্রকে তিনি একাই বাঁচিয়ে রেখেছেন। মাঝে মধ্যে ‘ঝড়ে বক মরা’র মতো হাতেগোনা কিছু সিনেমা সফল হয়েছে। তবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি কেউই। অন্য কোনো নায়ক মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারলেও শাকিব একের পর এক ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়ে চলেছেন। তার সিনেমা দেখার জন্য সিনেমা হলে হাউসফুল শো হয়। প্রযোজকরা পান লগ্নি করার সাহস। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে শাকিব একাই রাজত্ব করছেন এ ইন্ডাস্ট্রিতে। ঢাকাই সিনেমার কিং খান, সুপারস্টার কিংবা ভাইজান; সবই তিনি।
শুধু তাই নয়, গেল কয়েক বছরে তিনি ওপার বাংলাতেও দারুণ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। সেখানেও তৈরি হয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা। যার প্রমাণ তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো। এবারের ঈদেও শাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পী। তাদের মধ্যে অন্যতম আরিফিন শুভ, শরিফুল রাজ, মোশাররফ করিম, আদর আজাদ, চঞ্চল চৌধুরী, জাহিদ হাসান। তবে বরাবরের মতো শাকিব খান এবারও প্রেক্ষাগৃহে ‘তাণ্ডব’ দিয়ে সব ‘বরবাদ’ করে দেবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নায়িকাদের লড়াই
এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি লড়াই হবে ছোট পর্দার দুই অভিনেত্রী সাবিলা নূর ও তাসনিয়া ফারিণের মধ্যে। কারণ, প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় অভিষিক্ত হবেন তারা, হচ্ছেন মুখোমুখি। যে কারণে সবার নজর থাকবে এই দুই অভিনেত্রীর দিকে। শাকিব খানের সহশিল্পী হিসেবে ‘তাণ্ডব’ সিনেমার মাধ্যমে বাণিজ্যিক সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় আসতে যাচ্ছেন সাবিলা নূর।
অন্যদিকে, শরিফুল রাজের বিপরীতে ‘ইনসাফ’ সিনেমা নিয়ে বড় পর্দায় আসছেন তাসনিয়া ফারিণ। তবে প্রতিযোগিতার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবেন সাবিলা নূর। কারণ, প্রথম সিনেমায় সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন বড় তারকা শাকিব খানকে। যে কারণে একধাপ এগিয়ে এই ছোট পর্দার নায়িকা। এরই মধ্যে প্রকাশিত তার ‘লিচুর বাগানে’ চর্চায় রয়েছে। গানটির কারণে ভূয়াসী প্রশংসা কুড়াচ্ছেন এই অভিনেত্রী।
ক্যারিয়ারের শুরুতে জুটি বেঁধে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন চিত্রনায়িকা শনবম ইয়াসমিন বুবলী, ইয়ামিন হক ববি ও পূজা চেরি। এবার অন্য নায়কের বিপরীতে জুটি হয়ে পর্দায় আসছেন তারাও। শাকিব ছাড়া এই নায়িকারা কতটা আলো ছড়াতে পারবেন, তা সময়ই বলে দেবে। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ মুক্তির পর বড় পর্দায় ছিলেন না আজমেরী হক বাঁধন। কয়েক বছর ধরে নেই ছোট পর্দাতেও। দীর্ঘদিন পর মুক্তি পাচ্ছে তার নতুন সিনেমা। অন্যদিকে, ‘কাজল রেখা’ সিনেমায় দিয়ে বড় পর্দায় নাম লেখান মন্দিরা চক্রবর্তী। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সিনেমা নিয়ে ঈদ উৎসবে হাজির হচ্ছেন তিনিও।
সব মিলিয়ে বলা যায়, এবারের ঈদে বড় পর্দায় নায়িকাদের লড়াইটা বেশ জমজমাট হবে। মুক্তি প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলোর লড়াই কেমন হবে বা কোন সিনেমা বেশি দর্শকপ্রিয়তায় কোন নায়িকা এগিয়ে যাবে, সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ঈদের পর পর্যন্ত। তবে সিনেমার পাত্র-পাত্রী শতভাগ প্রত্যাশার কথা জানালেও শেষ পর্যন্ত দর্শকের কাছে কোন সিনেমাটি কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা কেবল সময়ই বলে দেবে।
ঈদে এত সিনেমা মুক্তির ঘোষণা অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আগেও বলেছি, এখনো বলছি- আমাদের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ‘তাণ্ডব’ বড় বাজেটের সিনেমা। শাকিব খানের সিনেমা ঘিরে সবারই বাড়তি আগ্রহ থাকে। সবাই তার সিনেমা দেখতে চায়। শাকিবের সিনেমাটা যদি অর্ধেকের বেশি হল পায় তাহলে অন্য সিনেমাগুলোর কি হবে। আমি মনে করি একসঙ্গে এত সিনেমা মুক্তির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। ঈদের পর ভালো সিনেমার অভাব দেখা দিবে। তখন কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেলে হলগুলো সচল থাকবে। না হলে আবার ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। একসঙ্গে বেশি সিনেমা আসা ঠিক না। অনেক ভালো সিনেমা ঈদের হুড়োহুড়িতে চাপা পড়ে যায়। সবার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’
সিনেমাগুলোর মুক্তির দিন এগিয়ে এলেও প্রচারে দেখা যাচ্ছে না তোড়জোড়। কয়েকটি সিনেমা ছাড়া ঈদের সিনেমার প্রচারের অবস্থা খুব নাজুক। দেশের বেশকিছু প্রেক্ষাগৃহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ করলে অধিকাংশই জানান, তাদের আগ্রহের শীর্ষে সুপারস্টার শাকিব খানের সিনেমা ‘তাণ্ডব’। যেটি পরিচালনা করেছেন ‘তুফান’ খ্যাত পরিচালক রায়হান রাফি। এ ছাড়া পরিবেশক ও বুকিং এজেন্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশের বড় বড় সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোর মধ্যে সাভার সেনা অডিটোরিয়াম, মনিহার (যশোর), নবীন (মানিকগঞ্জ), নন্দিতা (সিলেট), শাপলা (রংপুর), তামান্না (সৈয়দপুর), ছায়াবাণী (ময়মনসিংহ) এসব সিনেমা হলগুলোতে ‘তাণ্ডব’ চালাবে।
আপনার মতামত লিখুন :