শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৫, ০৪:২২ পিএম

বছরে ৩০ টন স্বর্ণ নিখোঁজ

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৫, ০৪:২২ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

বাংলাদেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা ১৮ থেকে ২০ টন। এসব স্বর্ণ উপহার ও অলঙ্কার হিসেবেই বেশি ব্যবহার হয়। চাহিদা ২০ টন ধরা হলেও আসছে দ্বিগুণেরও বেশি। অন্যদিকে, বিধিবহির্ভূতভাবে দেশে আসছে আরও কয়েকগুণ বেশি। যার কারণে বন্ধ ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ আমদানি এবং স্বর্ণ শোধনাগার।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী ব্যাগেজ রুলের আওতায় যাত্রীদের মাধ্যমে দেশে ২০২৩ ও ২৪ সালে স্বর্ণ এসেছে ১০৬ টন। যা বছরে চাহিদার অতিরিক্ত থাকছে ৩০ টন স্বর্ণ। 

বাংলাদেশ ব্যাংক এসব রিজার্ভ রাখতেও পারছে না। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকুলান, রিজার্ভ ঘাটতির কারণে এ ব্যর্থতা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশি মুদ্রায় আনা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ যায় কোথায় স্বর্ণের গন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, বাজুসের পক্ষ থেকে ভারতে পাচারের কথা বলা হলেও নেই পূর্ণ ধারণা বা গবেষণাপত্র। প্রত্যাশার নানান কথা জানালেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যনির্ভরতা ও ধারণার ওপর চলছে বাজুস। 

সাধারণত ছেলে-মেয়ের বিয়ে থেকে শুরু করে সম্পদ হিসেবেও স্বর্ণ কিনে রাখেন দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। ইউরোপে এর ব্যবহার নেই বলেই চলে এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে স্বর্ণের ব্যবহার অনেক কম। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে স্বর্ণের চাহিদা বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে দামও বেশি।

বিশ্বব্যাপী সোনার চাহিদাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। মানুষের অলংকার হিসেবে ৫৩ শতাংশ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক রিজার্ভ ১৮ শতাংশ, বিনিয়োগ ১৭ শতাংশ ও শিল্পে ১২ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। 

বৈশ্বিক চাহিদার অর্ধেকের বেশি চাহিদা সোনার অলংকারে বা উপহার হিসেবে। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতা রোধে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। তবে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে নীরবতা পালন করছে।

বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস), সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, বিদেশি মুদ্রার রিপরীতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আনা স্বর্ণ পাশের দেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে নেই কানো গবেষণাপত্র।

জাতীয় রাজস্ব বোর্র্ড (এনবিআর) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাজুস নীতি সহায়তা দাবি করেও কাজে আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকও স্বর্ণ রিজার্ভ রাখছে না। ফলে বছরে ৩০ টন স্বর্ণের মধ্যে কিছু উদ্দেশ্যহীন এবং কিছু বিভিন্ন গন্তেব্যে যাচ্ছে। স্বর্ণের ব্যবহার ও পাচারের পরিমাণ নিয়ে নির্দিষ্ট গবেষণা না থাকায় অজ্ঞাত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী সোনার চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৭৪০ টন। বিশ্বের সর্বোচ্চ সোনার অলংকার কনজ্যিউম ১০টি দেশের মধ্যে ভারত ও চীন অন্যতম। এশিয়া মহাদেশের ৬টি দেশ এ তালিকায় অবস্থান করছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

অন্যদিকে সোনার অলংকার রপ্তানিতে বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে চীন প্রথম (১২ দশমিক ৬ শতাংশ) এবং ভারত তৃতীয় অবস্থানে (১০ দশমিক ৭ শতাংশ) আছে। তবে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি টাকার সোনা চোরাচালান হয় বলে অনুমান করছে বাজুস।

স্বর্ণের নীতিমালা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেশের মোট চাহিদা বাজুস নির্ধারণ করে। তবে অতিরিক্ত ৩০ টন স্বর্ণের গন্তব্য সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক জানে না। নতুন করে রিজার্ভ বাড়ানোর কথাও ভাবছে না।’  

সিপিডির গবেষণা প্রধান ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেশে সোনার বাজার পুরোপুরি  পুরোনো সোনা ও ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। ব্যাগেজ রুলে ২০২২ সালে দেশে সোনা এসেছে প্রায় ৫২ টন। প্রথমে পুরনো সোনা পরিশোধন করে ২৪ ক্যারেট বানানো হয় এবং ক্যারিয়ারের মাধ্যমে আনা সোনার বারগুলোয় খাদ মিশিয়ে ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেটের গহনায় রূপান্তর করা হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বছরে সোনার চাহিদা রয়েছে ৪ টন। তবে বাজারের নতুন সোনার চাহিদা রয়েছে ১৮-৩৬ টন। মাত্র ১০ শতাংশ আসে পুরনো সোনা পরিশোধনের মাধ্যমে এবং ৯০ শতাংশের উৎস চোরাচালান। অস্বাভাবিক শুল্কহার, বিভ্রান্তিকর নীতিমালা প্রণয়ন, আমদানির ক্ষেত্রে কাগজপত্রের অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপণ, সিন্ডিকেট করে এসব আনা হয়। সোনার ব্যবসা কোণঠাসা করে রাখাই সোনা চোরাচালানের অন্যতম কারণ।’ বলেন তিনি।

যার কারণে বন্ধ স্বর্ণ আমদানি। স্বর্ণ আমদানিতে সব মিলিয়ে ১৫.৫০ শতাংশ শুল্ক-কর প্রযোজ্য। অন্যদিকে ব্যাগেজ রুল অনুসারে একটি বার (১০ ভরি) ৪ শতাংশ হারে শুল্ককর (৪০ হাজার টাকা) দিলেই বৈধ হয়ে যায়। ফলে ব্যাগেজ রুলের আওতায় টানা স্বর্ণের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন পাওয়া ১৮টি প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ আমদানি করছে না। ফলে ঢাকার ভাটারায় স্বর্ণ শোধনাগার তৈরি হলেও এখন বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বাজুস। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর ড. এম এম আকাশ বলেন, ‘২০২২ সালে কাস্টমসের মাধ্যমে দেশে এসেছে প্রায় ৫২ টন সোনা। যার পুরোটাই এসেছে ব্যাগেজ রুলে। বিদেশ থেকে কোনো যাত্রী দেশে প্রবেশের সময় ১০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনা বিনা ট্যাক্সে নিয়ে আসতে পারেন; যার প্রভাব পড়ে স্থানীয় হাতে তৈরি গহনার ওপর।’

চোরাচালান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সোনা চোরাচালানের সঙ্গে শুধু সোনা শিল্পগোষ্ঠীরাই জড়িত নয়, আরও অনেকেই জড়িত। এর মধ্যে যারা অন্য ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। বেসরকারি সূত্রের হিসাবে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সোনা চোরাচালান হয়। বার্ষিক হিসাবে যা প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা’ বলেন এ এম আকাশ।

এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্যাগেজ রুলের আওতায় যাত্রীদের মাধ্যমে ২০২৩ সালে ৫২ টন এবং ২০২২ সালে ৫৪ টনের মতো স্বর্ণ দেশে এসেছে।

স্বর্ণ আমদানি বিষয়ে এনবিআরের এক সদস্য বলেন, স্বর্ণ নীতিমালার আওতায় ২০১৯ সালে স্বর্ণ আমদানির জন্য ১৮টি প্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০৬.৭৬ কেজি স্বর্ণ আমদানির অনুমোদন দিলেও ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬০ কেজি স্বর্ণ। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি। ব্যাগেজ রুলের কারণে আমদানি বন্ধ রয়েছে। 

বাজুসের নিজস্ব কোনো গবেষণাপত্র না থাকার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) নির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাজুস চোরাচালান ঠেকাতে পারে না কিন্তু ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনবিআরকে একাধিকবার জানিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশের বিশাল বর্ডার দিয়ে এসব যায়। সেখানে পিওর গোল্ড যায়, আর আসে অর্নামেন্ট হয়ে’। 

‘স্বর্ণ কী পরিমাণ যায় এবং আসে সে বিষয়ে সঠিক নিরীক্ষা করা হয়নি’ উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গবেষণার কোনো কাগজ নেই। তবে ভারতে পাচার হওয়া ঠেকানোর আগে পাচার হয়ে আসা ঠেকাতে হবে। ব্যাগেজ রুলে একজন যাত্রী ১০০ গ্রাম স্বর্ণ আনতে পারে’ বলেন তিনি।

নিজস্ব গবেষণা না থাকায় বাজুসের প্রাথমিক ধারণা, প্রতিদিন দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার, সোনার বার, ব্যবহৃত পুরানো জুয়েলারি ও হীরার অলংকার (ডায়মন্ড জুয়েলারি) চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে।

যা বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২২০ কোটি টাকার সোনা ও সোনার অলংকার এবং ৩০ কোটি টাকার হীরা ও হীরার অলংকার বাংলাদেশে আসছে। সে হিসাবে এক বছরে ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সোনা ও ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার হীরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসছে।

বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারতে এসব পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাজুস। প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, অবৈধ পথে হীরা আমদানির বড় কারণ শুল্ক ফাঁকি। হীরা আমদানিতে শুল্ককর অনেক বেশি। যেমন বন্ড সুবিধা ছাড়া অমসৃণ হীরা আমদানিতে কর ৮৯ শতাংশ। 

মসৃণ হীরা আমদানিতে কর প্রায় ১৫১ শতাংশ। এই শুল্ককর ফাঁকি দিতেই মূলত অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণে হীরা আসছে। গত ১৯ বছরে এই মূল্যবান রত্ন আমদানিতে সরকার মাত্র ১২ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশের হীরার বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।
 

Link copied!