‘দুর্ঘটনার পর দৌড়ে এসে গাড়ির নিচ থেকে মরা মানুষ টাইন্না তুলছি। মানুষগুলো বিকৃত হয়ে গেছিন, সবাই ছিল রক্তাক্ত ও চেপটানো। এত মরণ এই গেরামের মানুষ আগে কখনো দেখে নাই।’ দুর্ঘটনার পর এমন কথাই বলছিলেন কাজিয়াকান্দা গ্রামের ইন্দিরাপাড় এলাকার জামাল উদ্দিন (৪০)।
এর আগে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুরে হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজিয়াকান্দা ইন্দিরারপাড় এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মাহিন্দ্রার সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হন। নিহতরা হলেনÑ লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার মালেক শাহর ছেলে কাজিম উদ্দিন (২৮), নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে লাল মিয়া (৩৬), ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার আফাজ উদ্দিনের ছেলে রুবেল (৩০), আ. কুদ্দুস আলীর স্ত্রী হাছিনা খাতুন (৫০), জবান আলীর ছেলে শামসুদ্দিন (৬৫), আলাল উদ্দিনের ছেলে নয়ন মিয়া (৪০), ফুলপুর উপজেলার জসিম উদ্দিনের ছেলে ফরিদ মিয়া (৩৮), মৃত মইজ উদ্দিনের ছেলে জাহের আলী (৭০)।
গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল কাজিয়াকান্দা গ্রামের ইন্দিরাপাড় এলাকায় নানা বয়সি নারী-পুরুষের ভিড় দেখা যায়। এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনের ভাঙা কাচের টুকরা ও লোহালক্কড়। এসব দেখে আক্ষেপ করছিলেন স্থানীয়রা। আর পাশেই সড়ক দিয়ে দ্রুতগতিতে চলছিল কয়েকটি যানবাহন। এসব চালককে ধীরে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষক রুহুল আমিন (৭৮)।
রুহুল আমিন বলেন, একটি লরি (ট্রাক্টর) নষ্ট হয়ে হালুয়াঘাটমুখী সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায় দ্রুতগতির মাহিন্দ্রাটি (অটোরিকশা)। মুহূর্তেই মাহিন্দ্রাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। বিকট শব্দ শুনে দুর্ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান তিনিসহ আরও কয়েকজন। সংঘর্ষের পর মাহিন্দ্রাটি বিদ্যুতের খুঁটিতে গিয়ে আছড়ে পড়ে। এর ভেতরে থাকা একটি মানুষও নড়াচড়া করতে পারেননি। সবাই একেবারে চিঁড়েচ্যাপটা হয়ে যান। স্থানীয় আব্দুল হামিদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, মাহিন্দ্রাটির যে অবস্থা হয়েছে, তাতে কোনো মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে থানায় মরদেহ নিতে আসেন নিহত কাজিম উদ্দিনের (২৮) ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গুড্ডিমারী গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার সময় মাহিন্দ্রার যাত্রী ছিলেন কাজিম। কাজিম তিন বছর ধরে হালুয়াঘাটে ইটভাটার খননযন্ত্রচালকের কাজ করতেন। তাঁর এক বছর আট মাস বয়সি একটি ছেলে আছে। ময়মনসিংহ জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. মাসুদ সরদার বলেন, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী বাংলা পরিবহনের একটি বাস হালুয়াঘাটের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে কাজিয়াকান্দা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রার সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়।
তিনি আরও বলেন, এতে ঘটনাস্থলেই এক নারীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়। আহতদের উদ্ধার করে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে একজন এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও দুজন মারা যান।
এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।