ইউক্রেনে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। দেশটি ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে ডাচ এবং জার্মান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। শনিবার (৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ ঘটনায় মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন ডাচ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুবেন ব্রেকেলম্যানস। তিনি রয়টার্সকে জানান, ‘উপসংহারে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, রাশিয়া ইউক্রেনে তীব্রভাবে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করেছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারের প্রমাণ সংগ্রহ করেছে সংস্থাগুলো। এর মধ্যে দেখা গেছে, ড্রোন থেকে শ্বাসরোধকারী ‘চকিং এজেন্ট’ (একধরনের অস্ত্র) ফেলা হয়েছে। সৈন্যদের পরিখা থেকে বের করে আনার জন্য যাতে তাদের গুলি করা যায়।
এদিকে, জার্মানির বিএনডি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ডাচ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে এই প্রমাণ পেয়েছে। অন্যদিকে, ডাচ মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (এমআইভিডি) প্রধান পিটার রিসিঙ্ক বলেছেন, ‘আমাদের নিজস্ব স্বাধীন গোয়েন্দা তথ্য অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই আমরা আমাদের নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে এটি নিজেরাই পর্যবেক্ষণ করেছি।’ রয়টার্সই প্রথম এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ডাচ মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (এমআইভিডি) প্রধান পিটার রিসিংক বলেছেন, ‘স্বতন্ত্র কিছু গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছি, তাই আমরা আমাদের নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে এটি নিজেরাই পর্যবেক্ষণ করেছি।’ কিয়েভের জরুরি সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাতের হামলায় অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে শহর ও সামরিক কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৩ ঘণ্টাব্যাপী এই হামলায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছে। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার রেকর্ড ৫৩৯টি ড্রোনের মধ্যে ৪৭৬টি তারা ধ্বংস করেছে। এছাড়া রাশিয়া ১১টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এদিকে রাশিয়ার ভোরোনেজ অঞ্চলের বোরিসোগলেবস্ক বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। কিয়েভের সামরিক জেনারেল স্টাফ শনিবার (৫ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি এই ঘাঁটিকে রুশ এসইউ-৩৪, এসইউ-৩৫এস এবং এসইউ-৩০এসএম যুদ্ধবিমানের ‘হোম বেস’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ফেসবুকে লেখা বিবৃতিতে জেনারেল স্টাফ জানিয়েছেন, তারা গ্লাইড বোমা, একটি প্রশিক্ষণ বিমান এবং সম্ভবত অন্যান্য বিমান সংবলিত একটি ডিপোতে আঘাত করেছেন। আরব নিউজ জানিয়েছে, রাশিয়ান কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ক্রমাগত হামলার মধ্যেই বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং যৌথ ড্রোন উৎপাদন নিয়ে আলোচনা করেছেন। জেলেনস্কির দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এই কথোপকথনে ইউক্রেনের নিরাপত্তা চাহিদা এবং পশ্চিমা সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দাবি, ইউক্রেনের আকাশ সুরক্ষিত রাখার জন্য একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রতিরক্ষাশিল্পের সক্ষমতা এবং যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে দুই নেতার মধ্যে।
বিশ্লেষকেরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে চীনের ভূরাজনৈতিক হিসাব অনেক জটিল। বেইজিং যা-ই বলুক, বাস্তবে তাদের অনেক কিছু হারানোর ঝুঁকি রয়েছে রাশিয়া যুদ্ধ হেরে গেলে। প্রকাশ্য ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানে থাকলেও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রপ্রধান কায়া ক্যালাসের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় বেইজিংয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তাতে যুক্তরাষ্ট্র তার পুরো মনোযোগ চীনের দিকে সরিয়ে ফেলতে পারে।