জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না বলে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। বিএনপিসহ অনেক দল ও জোট এ বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়েছেন। সব দল ও জোট জাতীয় সনদে নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবেন।
গতকাল মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৭তম দিনের আলোচনার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া।
গতকালের আলোচ্যসূচিতে ছিল প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে সর্বশেষ আলোচনার ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান।
দলীয় প্রধান আর প্রধানমন্ত্রী আলাদা ব্যক্তি প্রশ্নে একাধিক দিন সংলাপে আলোচনা হয়। সেখানে বিএনপি ও সমমনা দল এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং আম জনতার দল একই ব্যক্তিকে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা করার পক্ষে মত দেয়। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপিসহ কয়েকটি দল দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী করার বিপক্ষে মত দেন।
এ বিষয়ে ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনুরোধ যারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে উৎসাহী, যদি আপনারা প্রয়োজন মনে করেন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন, এটা আমাদের অনুরোধ। কিন্তু অতীতে যেভাবে নোট অব ডিসেন্টের কথা বলা আছে, সেভাবে জাতীয় সনদে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবে। এটা সিদ্ধান্ত হিসেবে আপনাদের জানালাম।’
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় খুবই স্বল্প। কয়েক দিনের মধ্যে যাতে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের কাজ সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য দলগুলোর সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রস্তাব দেয় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন। তাতে দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। পরে প্রস্তাবে সই করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। আলোচনার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে নিহতদের আত্মার শান্তি ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা একটি গভীর শোকাবহ সময়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছি। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যেসব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিহত হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, আমরা যেন তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছি, নিহত ও আহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনারা পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছি।’
বৈঠকের সঞ্চালনায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘এমন একটি সকালে আমরা ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনায় আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি, যখন পুরো দেশ শোকাহত। ফুলের মতো তাজা প্রাণ ঝরেছে। অনেকে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সময় স্বল্পতায় আলোচনা স্থগিত রাখার সুযোগ নেই।’
আপনার মতামত লিখুন :