একসঙ্গে স্কুলে যেত তারা, একসঙ্গে খেলতো, পড়তো। বাবা-মায়ের আদরের সেই দুই শিশু এখন আর নেই। বিমান দুর্ঘটনার ভয়াল আগুনে দগ্ধ হয়ে অবশেষে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলো দুই ভাইবোন- নাজিয়া ও নাফি।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে মৃত্যুর কাছে হার মানে ৯ বছরের শিশু নাফি। এর একদিন আগেই সোমবার রাত ৩টার দিকে মারা যায় তার বড় বোন, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজিয়া।
দুই ভাইবোনের প্রাণহানি শুধু একটি পরিবারের নয়, যেন গোটা জাতির হৃদয়ে গভীর ক্ষতের মতো হয়ে থাকবে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নাফি। তার শরীরের ৯৫ শতাংশই দগ্ধ হয়েছিল। এর আগে ৯০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে মৃত্যুবরণ করে নাজিয়া।
নাজিয়া ও নাফি বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় থাকত। তারা দুজনেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। স্কুল ইউনিফর্ম পরে প্রতিদিন সকালে বের হতো, হাতে হাত ধরে। এখন সেই হাত দুটি আর কখনও ছুঁয়ে দেখবে না কেউ।
দুর্ঘটনার পর তাদের হাস্যোজ্জ্বল একটি পারিবারিক ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবির সেই প্রাণবন্ত মুখদুটো যেন এখন সময়ের এক নির্মম ব্যঙ্গ। যারা ছবিতে ছিল, তারা আজ শুধুই স্মৃতি।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, ‘নাফির শরীরের বড় অংশ পুড়ে গিয়েছিল। আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। কিন্তু রক্ষা করা গেল না। এর আগে তার বোনকেও হারিয়েছি আমরা।’
মৃত্যু বাড়ছেই, শিশুরাই বেশি
উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের পাশেই রোববার (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে, মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এ পর্যন্ত শুধু জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটেই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু।
দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন-
মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মাসুকা আক্তার, প্রাথমিকের শিক্ষার্থী বাপ্পি (৯), এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), সায়ান ইউসুফ, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফনান ফাইয়াজ, স্কুলের কো-অর্ডিনেটর মাহেরীন চৌধুরী, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সামিন, এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেও একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
এখনো বাঁচার লড়াই
দুর্ঘটনায় আহত ও দগ্ধ আরও অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী এখনো চিকিৎসাধীন। তাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক। কয়েকজন শিশু গভীর কোমায় আছে, কেউ কেউ সাড়া দিচ্ছে না চিকিৎসায়। স্বজনদের অপেক্ষা যেন অনিশ্চয়তার এক দীর্ঘ কষ্টময় লাইন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। এতে শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে, যার বেশির ভাগই শিশু। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে সব পরীক্ষা।
আপনার মতামত লিখুন :