গণঅভ্যুত্থানে ফেনীতে ছাত্র হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ ২২১ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাবেদ আক্তারের আদালতে চার্জশিট জমা দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপালে ৪ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী সমাবেশের ওপর হামলা করে। এ সময় হামলাকারীরা নির্বিচারে বোমাবর্ষণ ও গুলি চালায়। এ ঘটনায় আটজন নিহত এবং শত শত ছাত্র-জনতা আহত হয়।
ওই দিন আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন কলেজছাত্র মাহবুবুল হাসান। তিনি সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের তরাব পাটোয়ারী বাড়ির মৃত নোমান হাসানের ছেলে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মাহবুবুলের বড় ভাই মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ৫০০ জনকে।
মামলার দীর্ঘ তদন্ত ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ২২১ জনের নামে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। এজাহারভুক্ত ১৬২ জনের মধ্যে ১৫৬ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। অতিরিক্ত তদন্তে যোগসাজশ পাওয়ায় আরও ৬২ জনকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চার্জশিটে অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসডিয়াম সদস্য লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী রয়েছেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ মামলায় ৫১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। আবার মামলায় নাম আসা নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
জানতে চাইলে মামলার বাদী মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, তিনি তার ভাইয়ের হত্যায় জড়িত সবার শাস্তি চান। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিরা বিচারের আওতায় আসুক, এটাই তার চাওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনÑ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ছাগলনাইয়া সার্কেল) তসলিম হোসেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী সার্কেল) সৈয়দ মোমিদ রায়হান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা, ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :