শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সৈকত মন্ডল, বাগেরহাট

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০১:১২ এএম

২৫ বছরে বাঘের আক্রমণে ৪২৫ জনের মৃত্যু

সৈকত মন্ডল, বাগেরহাট

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০১:১২ এএম

২৫ বছরে বাঘের আক্রমণে  ৪২৫ জনের মৃত্যু

আড়াই দশক আগে এক শুক্রবার সুন্দরবনের গহিনে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার মো. আব্দুস সামাদ হাওলাদার। দুপুরে খেতে বসার আগমুহূর্তে বাঘের আক্রমণের মুখে পড়েন তিনি। বাঘটি তার গলার নিচে কামড়ে ধরে। তিনিও শুরু করেন জীবন-মরণ যুদ্ধ। একপর্যায়ে অন্য কাঠ সংগ্রহকারীরা এগিয়ে এলে চলে যায় বাঘটি। ততক্ষণে দুই চোখই হারিয়েছেন তিনি। তবে বেঁচে ফিরেছিলেনÑ এতটুকুই সান্ত¡না তার। 


সুন্দরবনে বিভিন্ন সময়ে এভাবেই বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বৈধ বা অবৈধভাবে প্রবেশকারীরা। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর সকালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পর সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তুলাতলা বন থেকে শিপার হাওলাদার (২২) নামের এক জেলের দেহবিচ্ছিন্ন মাথা ও প্যান্ট উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের ধারণা, বাঘ তাকে খেয়ে মাথা ফেলে রেখে চলে গেছে। শিপারের মৃত্যু নিয়ে তখন হইচই হলেও বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া মাছ ধরতে যাওয়ায় সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি শিপারের পরিবার।


শরণখোলা উপজেলার পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা শিপারের মৃত্যুতে তার পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী মোরশেদা বেগম ও পাঁচ বছর বয়সি মেয়ে সিনথিয়ার দিন কাটছে অভাব-অনটনে। শুধু শরণখোলা উপজেলা নয়, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলার অনেক মানুষই জীবিকার প্রয়োজনে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন।


বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে (২০০১-২০২৫) সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে ৪২৫ জন মারা গেছেন। এই সময়ে আহত হয়েছেন ৯৫ জন। তবে এর বাইরেও আহত-নিহতদের একটা বড় সংখ্যা রয়েছে, যারা বন বিভাগের তালিকায় আসেননি। ২০১১ সালে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নীতিমালা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগ ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন আহত ও নিহতদের।


বনসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বাঘের আক্রমণে আহত ও নিহতদের পরিবারগুলো খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। নানা নিয়মকানুনের বেড়াজালে তারা সরকারি সহযোগিতাও পান না। আর সরকার যে সহযোগিতা করে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আহত-নিহতদের পরিবারগুলোর স্বাভাবিক জীবনের জন্য মাসিক ভাতা প্রদানের দাবি জানান বনজীবী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।


বন্যপ্রাণী আইনের আওতায় মানুষের জানমালের ক্ষতিপূরণ নীতিমালা অনুযায়ী, বন্যপ্রাণীর আক্রমণে কেউ মারা গেলে ১ লাখ, আহত হলে ৫০ হাজার এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২৫ হাজার টাকা পায়। 
এ বিষয়ে সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ২০১১ সালে নীতিমালা করে সুন্দরবনে যেকোনো প্রাণীর আক্রমণে আহত, নিহত বা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার সহযোগিতা শুরু করে। তবে এর অন্যতম শর্ত বৈধ পাস পারমিট নিয়ে নিয়ম মেনে বনে প্রবেশ করতে হবে। যেসব নারীর স্বামীরা বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন, তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিশেষ সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সুন্দরবনে তিনটি খাল রয়েছে, যেখানে শুধু বাঘবিধবারাই মাছ আহরণ করতে পারেন বলে জানান তিনি।


এদিকে বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছরের ব্যবধানে করা দুটি জরিপে দেখা যায়, প্রায় ১০ শতাংশ বাঘ বেড়েছে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে। প্রকল্পের মাধ্যমে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ, নিরাপত্তা জোরদার, অপরাধীদের ছাড় না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বনে বাঘ বাড়ছে বলে দাবি বন বিভাগের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি এর সুরক্ষা, প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যা বাড়ানোসহ সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করতে হবে বন বিভাগকে।


বন বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট রেঞ্জের ৬৩৯টি গ্রিডে ক্যামেরা বসিয়ে ফের করা হয় গণনা। ২০২৪ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঘের সংখ্যা ১২৫। 


এ বিষয়ে বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম করা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরায় বনের ৭৪ কিলোমিটার এলাকা ফেন্সিং করা হচ্ছে, ইতিমধ্যে ৬০ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। আগের চেয়ে বনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।


অপরাধীদের ক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। বন অপরাধে জড়িতদের কোনো ছাড় নেই। সুপেয় পানি, আবাসস্থলসহ বাঘের সুরক্ষায় নেওয়া এসব উদ্যোগের ফলে বাঘ বাড়ছে বলে জানান তিনি। 


‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী নূর আলম শেখ বলেন, বন বিভাগ বাঘ বৃদ্ধির কথা বললেও এই সংখ্যা কোনোভাবেই আশানুরূপ নয়। ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে বলা হয়, ১২ বছরের মধ্যে এর সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। সেই হিসাবে সুন্দরবনে বাঘ বৃদ্ধির সংখ্যা নগণ্য।
বাঘের আবাসস্থল নিরাপদ নয় দাবি করে তিনি বলেন, একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, অন্যদিকে বিষ দিয়ে অনবরত মাছ নিধন হচ্ছে। এই পানি পান করে বাঘ যেমন অসুস্থ হচ্ছে, তেমনি বনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক চোরাচালান সিন্ডিকেট সুন্দরবনে সক্রিয় আছে। তারা বাঘের দেহাংশসহ বিভিন্ন প্রাণী পাচারে জড়িত। এদের হাত থেকে বন রক্ষা করতে না পারলে বন্যপ্রাণীসহ সুন্দরবনের সংকট দিনে দিনে বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!