বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০১:১৯ এএম

থেমে নেই আ.লীগের ষড়যন্ত্র

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০১:১৯ এএম

ছবি -সংগৃহীত

ছবি -সংগৃহীত

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং তার সরকার বা দলের নেতাকর্মীরা এখনো নানামুখি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত চার শতাধিক হত্যা মামলার আসামি ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতারা এক বছর পার হলেও নিজেদের কৃতকর্মের জন্য কোনো ধরনের অনুশোচনা করেনি। বরং দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থেকে বর্তমান সরকার এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে অনলাইন ও অফলাইনে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতেও নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে পতিত আওয়ামী সরকারের সিনিয়র নেতারা। একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে এমটাই জানা গেছে।

বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে ভারতে পালিয়ে থেকেও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দলকে সংগঠিত করতে যোগাযোগ করে যাচ্ছে। হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যাদের হাতে রক্তের দাগÑ সেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো সরকারের ভেতরে থেকে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে। দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারী আ.লীগের শীর্ষ নেতারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে থেকে দেশে থাকা নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশের অর্থনীতি লুটেরারা বিপুল অর্থ খরচ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

দেশে আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমকে ব্যবহার জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে অনুসারীরা। বছর পার হলেও হাসিনা ও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা জুলাইযোদ্ধা বা জুলাই আন্দোলনে যুক্ত দেশের আপামর জণসাধারণকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়েছেন। আন্দোলনে জঙ্গি হামলার ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক অভিযোগ এনেও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে, ২০২৪ এর আন্দোলন দমনে যেভাবে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তাতে যত প্রাণহানি হয়েছে, সেটির দায় স্বীকার করে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি দলটিকে। দলটির নেতাকর্মী এখনো বিশ্বাস করেন যে, গণঅভ্যুত্থানের নামে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের’ মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের।

সূত্রমতে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যেয় অর্ধলক্ষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী পালিয়ে গেছেন। বিদেশে বসে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আলাদা আলাদা নেটওয়ার্ক তৈরি করে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সেই নেটওয়ার্কে শেখ হাসিনা ও ওয়াবদুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা নানা পরিকল্পনায় ব্যস্ত। দেশে থাকা নেতাকর্মীদের নানাভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সরকারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তথ্য পাচার করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০২৪ এর ৫ আগস্টে হাসিনা সরকার পতন হলে রাজধানী থেকে শুরু করে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়। বছর পার না হতেই তারা ধীরে ধীরে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। ভোল পাল্টে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার স্বপ্নে এখনো বিভোর দলটির নেতাকর্মী ও অনুসারীদের।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বরতরা নানাভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় গোপন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। গোপন বৈঠকে ভারতে পালিয়ে থাকা নেতারা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছেন। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ঢাকার একটি অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে তিন শতাধিক আ.লীগ নেতাকমীকে ট্রেনিং দেওয়ার অভিযোগে সেনাবাহিনীর একজন মেজরকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। অন্যদিকে, চলতি সপ্তাহে ভারতে থাকা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ট্রেলিগ্রাম অ্যাপস ব্যবহার করে গোপন মিটিং করেছেন শেখ হাসিনা। 

গোয়েন্দা তথ্যমতে, গোপন মিটিংয়ে শেখ হাসিনা নেতাদের দেশে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে সহযোগিতা করছেন বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকাসহ সারা দেশের সিক্রেট এজেন্টের সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকা-ে তাদের সঙ্গে মিলে তৎপরতা দেখাচ্ছে। বর্তমানে প্রকাশ্যে আওয়ামী কোনো কর্মসূচি না দিলেও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে অনলাইন ও অফলাইনে অপপ্রচার ও গুজবকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা অনুসারীরা দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থেকে বা সরকারের ভেতরে-বাইরে থেকে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অফলাইন-অনলাইন মিথ্যাতথ্য, প্রপাগ্রান্ডা, গুজব ও অপ্রপ্রচার রূখতে সরকার কাজ করছে। গণহত্যায় যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাহিনীগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চলমান। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে একযোগে কাজ করছে সরকার ও সাধারণ জণগণ।

২৪ এর ছাত্র আন্দোলন শুরুর সময় থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আন্দোলন দমাতে শক্তি প্রয়োগ করায় সহিংসতা রূপ ধারণের পর ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ জনতা ও বিরোধীদলগুলো তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাসিনার অনুগত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হত্যাযজ্ঞে জড়িয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। স্বাধীনতার পর দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ধ্বংসের পেছনে আওয়ামী লীগের নাম যুক্ত হয়, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতকে তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত করা হয়। বাংলাদেশকে বিশে^র কাছে গুম-খুনের রাষ্ট্রে পরিণত করেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। ’৭৫-এর মতো একদলীয় বাকশালী শাসনে চালান শেখ হাসিনা। দেশ শাসনের সময়ে আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও ভিন্নমত দাঁড়াতে পারেনি। নির্বাচন ও নির্বাচনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। তাদের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ দেশ চালাত।

মানবতাবিরোধী বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সবব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর নেতারা ‘আত্মগোপনে’ চলে যাওয়ায় দলের চরম বিপর্যয় কাটানোর পতনের তিন মাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে গত বছরে ১০ নভেম্বর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে কর্মসূচি ঘোষণা করে। একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবেিরাধী ছাত্র আন্দোলন। আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন দল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিরোধ এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে তা সফল হয়নি। এরপর আর দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি দিতে দেখা যায়নি দলটির। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় পেজ বা নেতাদের আইডিতে নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়াও ভারতীয় মিডিয়ায় প্রপাগান্ডায় আ.লীগের নেতারা তথ্য বা সাক্ষাৎকার দিয়ে অংশ নিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার একাধিক ফোনালাপও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন শেখ হাসিনা। মূলত ভারত সরকারের আশ্রয়ে থেকে গোপনে দলকে ধীরে চলো নীতিতে সংগঠিত করছেন বলে আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতারা বলছেন। ‘ধীরে চলো নীতি’তে সামনে এগোতে চায় আওয়ামী লীগ।

সরকার, বিএনপি, এনসিপি ও জামাতের নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ আবারও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বারবার তারা বলছেন, শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে তার মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে শলাপরামর্শ করে দেশে সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পনা করছেন। সম্প্রতি রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে তাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এ নিয়ে ভারতের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক উত্তর আসেনি। 

তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেউ আসুক আর না আসুক, তার জন্য তো বিচার আটকে থাকে না। ‘সরকার প্রয়োজন মনে করলে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার সহযোগিতাও নিতে পারে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, অপরাধীর কোনো দল নেই। যে বা যারা দেশের আইন ভঙ্গ করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। র‌্যাব সদস্যরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সদাপ্রস্তুত। র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়ন অপরাধ দমনে কাজ করছে।

অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, যে বা যারা অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করুক না কেন পুলিশ তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে মোকাবিলা করবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!