নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পানি নিষ্কাশনের পথে বাঁধ দেওয়ায় একটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার একর ফসলি জমি ও শতাধিক মাছের পুকুর। উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের প্রতাপপুর এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ক্যানালে তিন থেকে চারটি বাঁধ দেওয়ার কারণে এই জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। এতেকরে চরম অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের ক্যানালটি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ছিল। কিন্তু সুগার মিল কর্তৃপক্ষ ক্যানালটি মাছ চাষের জন্য স্থানীয় কামাল বাবু নামে এক ব্যক্তিকে লিজ দিলে তিনি ক্যানালে ৩/৪টি বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে ইউনিয়নের প্রতাপপুরসহ আশেপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, চলতি বর্ষ মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ক্যানাল বন্ধ থাকায় জমি ও পুকুর ডুবে যাওয়ায় গ্রামবাসীর জীবিকা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই কৃষি ও মাছচাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, সেগুলো একেবারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিবারে খাবার সংকটও দেখা দিয়েছে। আবার অনেকের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে, তারাও পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এমন পানিবন্দি অবস্থায় ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েক দিন আগে গ্রামবাসী ক্যানালের একটি বাঁধ ভেঙে দেয়। এতে কামাল বাবুর ক্যানালের চাষকৃত মাছ বেরিয়ে অভিযোগে তিনি কয়েকজন গ্রামবাসীর নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন।
এদিকে এলাকাবাসী ক্যানালটি অবিলম্বে উন্মুক্ত করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
প্রতাপপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী আতাহার আলীসহ কয়েকজন বলেন, ‘এবার যে পানি (বৃষ্টি) হচ্ছে, জীবনে এমন পানি দেখিনি। কামাল বাঁধ দিয়া পানি আটকে দিছে। সব ঘরবাড়ি আর জমি পানির নিচে। খাব কী, কিভাবে বাঁচব কী বুঝতেছি না।’
জানতে চাইলে কামাল বাবু বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই মাছ চাষের জন্য মিল থেকে ক্যানাল লিজ নিয়েছি। ক্যানালে বাঁধ দেইনি, শুধু মাছ ধরে রাখার জন্য কিছু ঘেরা ছিল। বেশি বৃষ্টির কারণে পানি জমেছে। কিন্তু ক্যানাল থেকে মাছ মেরে নিয়ে লোকজন বাঁধ ভেঙেছে তাই বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।’
নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের অন্তর্গত কৃষ্ণা কৃষি খামারের খামারপ্রধান খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ম মেনেই ক্যানাল লিজ দেওয়া হয়েছে। তবে লিজের শর্তে বলা আছে, পানির স্বাভাবিক গতি বন্ধ করা যাবে না। কামাল বাবু সেটা মেনেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমি চাই না গ্রামের মানুষ কষ্ট পাক। তারা সরাসরি এসে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এখন তারা বাঁধ ভেঙে দিয়ে তার মাছ বের করে দিয়েছে, এতে উল্টো সমস্যা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইউএনও স্যার আমাকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। আমি সেটির কাজ করছি।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ আফজাল রাজন এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তিনি এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। তবে গণমাধ্যমের কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন