মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৮:০৪ এএম

আশ্রয়ের বদলে নদী ভাঙনে দুঃস্বপে

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৮:০৪ এএম

আশ্রয়ের বদলে নদী ভাঙনে দুঃস্বপে

*** ঝুঁকিতে আশ্রয়ন প্রকল্প
*** সিডরের ক্ষয় ও দীর্ঘদিনের সংস্কারহীনতা বাড়াচ্ছে দুর্ভোগ
*** জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি, সুপেয় পানির সংকট, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অভাব
*** নদীতে বিলীন হওয়ার আশংকায় প্রায় তিনশ বাসিন্দা

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম খাজুরা গোড়া খাল আশ্রয়ণ প্রকল্প এখন ভাঙনের মুখে। ২০০৫ সালে খাপড়াভাঙ্গা নদীর কোলঘেঁষে জেলেদের পুনর্বাসনের জন্য গড়ে তোলা এ প্রকল্পে বর্তমানে ৭১ পরিবার বসবাস করছে। তবে জরাজীর্ণ ঘরবাড়ি, সুপেয় পানির সংকট, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অভাব আর ভয়াবহ নদী ভাঙনে প্রকল্পটি বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়ের বদলে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, জায়গা কিংবা ঘরবাড়ি নেই এমন জেলেদের কথা চিন্তা করে সরকার ২০০৫ সালে খাপড়াভাঙ্গা নদীর কোল ঘেষে ৮০ পরিবারের জন্য গড়ে তোলেন একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প। যেখানে জেলেদের সুখে শান্তিতে বসবাস করার কথা। কিন্তু বসবাসের দুই বছরের মাথায় ভয়াল সিডর তাদের সেই সুখের নীড়ে হানা দেয়। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি। এরপর দীর্ঘ বছর চলে গেলেও মেরামত বা সংস্কার হয়নি। এরই মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে আরেক বিপদ। খাপড়াভাঙ্গা নদীটি জেলেদের প্রোতাশ্রয় হওয়ায় দ্রুত গতির মাছধরা ট্রলার চলাচলের কারণে নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে।

এতে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। যেকোনো সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশংকায় রাত-দিন পার করছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় তিনশ বাসিন্দা। নদীভাঙন রোধে এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়ে এলেও সারা দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ আশ্রয়ণের বাসিন্দা লাইলী বেগম বলেন, ‘আমরা যেই ঘরে বসবাস করছি সেই ঘর মানুষ তো দূরের কথা গরু-মহিষও থাকার উপযোগী না।’

নুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা এখানে যারা বসবাস করছি সবাই জেলে। অনিশ্চিত জীবন নিয়ে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করছি। প্রতিটি ঘরের টিন ক্ষয়ে পড়ছে। ঘরের দরজা জানালা, বেড়া নেই। ঘরে বসেই আমরা আকাশ দেখি। সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ছে। কোনোমতে পলিথিন দিয়ে বসবাস করছেন তারা। এ ঘরে কোনো মানুষ থাকতে পারে না। বাধ্য হয়ে আমরা বসবাস করছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জালাল হাওলাদার (৫৫) বলেন, ‘এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বিএনপি সরকারের সময় গড়ে তোলা হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের এই ঘর মেরামত করে দেয় নাই।’

সরেজমিনে জানা গেছে, পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের পশ্চিম খাজুরা গোড়া খাল আশ্রয়ণ প্রকল্প। আন্ধারমানিক ও খাপড়াভাঙ্গা নদীর সংযোগ স্থলে নদীর কোলঘেঁষে ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পটি গড়ে তোলার পর দীর্ঘ বিশ বছর পেরিয়ে গেছে। পলিথিন বিছিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে দিনযাপন করছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পটির অবস্থা এতটাই জরাজীর্ণ যে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার। সুপেয় পানির ব্যবস্থা। নেই শিশু শিক্ষালয়।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করায় শিশু কিশোররা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মিরাজ খলিফা, জালাল হাওলাদার, ছগির, জয়নাল, আবুল হোসেন, জামাল মোল্লা, জালাল ফকির, সোহরাবসহ ৯টি পরিবার এখান থেকে চলে গেছে। যারা আছে তারাও এই আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে চলে যেতে চান। তবে তাদের অন্য কোথাও যাবার জায়গা না থাকায় যেতে পারছে না।

১ নম্বর সিরিয়ালের ১ নম্বর ঘরে বসবাস করেন আবুল কালাম হাওলাদার (৪৩)। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর অনেক সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা এসেছেন। তারা এসে শুধু আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে শুনে গেছেন। বিভিন্ন জনে ঘর মেরামতসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কথা বললেও কেউ কোনো কথা রাখেনি। তার দাবি এই আশ্রয়ণ প্রকল্প তাদের জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব সময় আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে হয়। যেকোনো সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নদীতে চলে যেতে পারে। আমরা এই পরিস্থিতিতে কি করব ভেবে পাচ্ছি না।

আশ্রয়ণ প্রকল্পটির বাসিন্দারা এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এখানকার বাসিন্দা আবু কালাম বলেন, ‘মাছ ধরা ট্রলারগুলো এত জোরে চালায় যে ঢেউ আমাদের ঘরে ওঠে। নিষেধ করলেও শোনে না।’

কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সভাপতি রুহুল আমিন মাঝি বলেন, আশ্রয়ণের লোকজন বিষয়টি আমাদের অবহিত করার পর স্থানীয় ট্রলারগুলো আস্তে চালায়। কিন্তু দূর-দূরান্তের ট্রলারগুলো দ্রুত চালাচ্ছে। যার কারণে আশ্রায়ণ এলাকার ভাঙন কমছে না।

এ বিষয়ে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, বিষয়টি আমাকে আশ্রয়ণের লোকজন অবহিত করেছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীভাঙন রোধ হবে।

জরাজীর্ণ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা এবং পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। জরাজীর্ণ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামতের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। নদীভাঙন রোধ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সঙ্গে বসে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!