বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে একটিমাত্র টিকায়। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এমনটাই দাবি করেছে রাশিয়া। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের শরীরেও টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলেছে। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের পরে রাশিয়া দাবি করেছে, তাদের তৈরি ‘এন্টেরোমিক্স’ টিকা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারবে। টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলে ১০০ শতাংশ সফল হয়েছে বলে দাবি রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের।
দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল মেডিকেল রিসার্চ রেডিওলজিক্যাল সেন্টার ও ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজির যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালে শতভাগ সফলতা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। রাশিয়ার ফেডারেল মেডিকেল অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল এজেন্সির (এফএমবিএ) প্রধান ভেরোনিকা স্কভোর্টসোভা ইস্টার্ন অর্থনৈতিক ফোরামে ঘোষণা দিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন মিলে চলতি মাসেই বাজারে এন্টারোমিক্স নামের এই ভ্যাকসিন ছাড়ানো হবে। রুশ বার্তা সংস্থা তাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি প্রথম এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ক্যানসারের টিকা।
এন্টারোমিক্স হলো প্রথম এমআরএনএ প্রযুক্তির ক্যানসার ভ্যাকসিন, যা রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যানসারের মতো জটিল রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো শক্তিশালী করে তোলে। এই প্রযুক্তি দিয়েই আগে করোনার টিকা তৈরি হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, টিকাটি ক্যানসারের প্রাথমিক ও মধ্যম পর্যায়ে সবচেয়ে কার্যকর। এটি কেবল ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে না, বড় টিউমারও উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট করে। টিকা গ্রহণকারীদের শরীরে কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এখন শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে।
রুশ ফেডারেল মেডিকেল-বায়োলজিক্যাল এজেন্সির প্রধান ভেরোনিকা স্কভোরৎসোভা জানান, এ যুগান্তকারী ওষুধটি রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। রাশিয়ার নতুন ক্যান্সার টিকা প্রাক-ক্লিনিকাল পরীক্ষায় উচ্চ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। টিকাটি এখন প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন রুশ ফেডারেল মেডিকেল-বায়োলজিক্যাল এজেন্সির প্রধান ভেরোনিকা স্কভোরৎসোভা। তিনি জানান, এ যুগান্তকারী ওষুধটি রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ভøাদিভোস্তকে ‘ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম’-এর সাইডলাইনে গত শুক্রবার ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্কভোরৎসোভা বলেন, তিন বছর ধরে চলা প্রাক-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় টিকাটি অসাধারণ ফল দেখিয়েছে। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে টিকার নিরাপত্তা, বারবার প্রয়োগের সামর্থ্য এবং উচ্চ কার্যকারিতা। এটি টিউমারের আকার কমিয়েছে এবং বৃদ্ধিকে ধীর করেছে।’
তিনি আরও জানান, কিছু ক্যানসারে কার্যকারিতা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বিলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, রোগীদের বেঁচে থাকার হার বেড়েছে। এটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ স্কভোরৎসোভা জানান, গ্রীষ্মের শেষে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নথিপত্র জমা দিয়েছেন, যাতে ক্লিনিক্যাল ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায়। প্রথম পর্যায়ে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের (অন্ত্র ও বৃহদান্ত্রের ক্যানসার) জন্য টিকা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে গ্লিওব্লাস্টোমা (মস্তিষ্কের ক্যানসার) ও মেলানোমার (ত্বকের ক্যানসার) জন্য টিকা আনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
টিকাটি তৈরি করেছে গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এটি একটি এমআরএনএভিত্তিক টিকা, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যানসার কোষ আক্রমণ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
গামালেয়া ইনস্টিটিউটের প্রধান আলেকজান্ডার গিনৎসবুর্গ আগেই বলেছিলেন, টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া একেবারেই আলাদা ধরনের। তিনি বলেন, ‘এটি প্রচলিত ওষুধ নিবন্ধনের থেকে একেবারেই ভিন্ন একটি প্রক্রিয়া।’ উল্লেখ্য, একই প্রতিষ্ঠানই রাশিয়ার স্পুটনিক ভি কোভিড-১৯ টিকা তৈরি করেছিল। বর্তমানে তারা একই এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এইচআইভি টিকা তৈরির কাজও করছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন