মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাপী পোশাক আমদানির পরিমাণ ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ কমেছে। তবে একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির পরিমাণ ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। তুলনামূলকভাবে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ চীনের রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বিপরীতে, ভিয়েতনাম ও ভারতের রপ্তানি যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, আর কম্বোডিয়ার রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশের আমদানি ভলিউম বেড়েছে ২৬ দশমিক ৬২ শতাংশ।
ইউনিট মূল্যের ক্ষেত্রে, বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কমেছে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। চীন ও ভারতের ইউনিট মূল্য যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার ইউনিট মূল্য যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে এবং কম্বোডিয়ার ইউনিট মূল্য বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশে এই বৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) ২০১৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এক দশকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিমূল্যের বিবেচনায় চীনে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ৪৬ শতাংশ। এ সময় বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫৪ কোটি (৩০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন) ডলার। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে তা নেমে আসে ১ হাজার ৬৫১ কোটি (১৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন) ডলারে। অন্যদিকে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৪০ কোটি (৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) ডলার, গত বছর তা বেড়ে ৭৩৪ কোটি (৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন) ডলারে উন্নীত হয়েছে। হিসাব বলছে, এই ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। বিপরীতে বাংলাদেশের বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে চীন ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ২০১৭ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, সে সময় থেকেই চীন-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক লড়াই শুরু হয়। তখন থেকেই চীনা পোশাকের রপ্তানি কমতে থাকে।
পরিমাণে গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পোশাকের রপ্তানি কমেছে ১৮ শতাংশেরও বেশি, যেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশের মতো। ২০১৫ সালে চীনা পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ১৩৮ মিটার। গত বছর তা ৯২৯ মিটারে নেমে আসে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১৮৭ মিটার, যা গত বছর ২৩৭ মিটারে উন্নীত হয়। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যপ্রতি দর বা ইউনিট প্রাইসও কমেছে ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশের মতো।
উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, দশকের শুরুতে ২০১৫ সালে চীনা পণ্যের গড় ইউনিট প্রাইস ছিল ২ ডলার ৬৮ সেন্ট। ২০২৪ সালে তা কমে ১ ডলার ৭৮ সেন্টে নেমে আসে, যেখানে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের পোশাকের ইউনিটপ্রতি গড় দর ছিল ২ ডলার ৮৯ সেন্ট। তা থেকে বেড়ে গত বছর ৩ ডলার ১০ সেন্টে উন্নীত হয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে গত ৮ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে এখন সব মিলিয়ে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে বলে হিসাব দিয়েছে এই খাতের রপ্তানিকারকদের প্রধান সংগঠন বিজিএমইএ। তার পরও সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। কেননা, ট্রাম্প শুল্ক কার্যকরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের হারানো ব্যবসা পাচ্ছে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই চীনের হারানো ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসছে। আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বেশি আসবে বলে আশা করছেন তারা।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ট্রাম্প শুল্ক বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে। কারণ, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন। তখন থেকেই চীন থেকে অল্প অল্প করে ক্রয়াদেশ সরছিল। গত বছর নির্বাচনি প্রচারণায় চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বাড়তি ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে থাকে। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ট্রাম্প চীনের ওপর চূড়ান্ত পাল্টা শুল্ক কতটা বসাবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদি সেটা বড় অঙ্কের হয়, তাহলে চীন থেকে ক্রয়াদেশ আরও সরবে। দেশটি থেকে বেশি দামের যেসব পোশাক সরবে, তার বড় অংশ পাবে ভিয়েতনাম। তবে স্থানান্তরিত হওয়া কম দামের পোশাকের অধিকাংশ বাংলাদেশে আসবে। তিনি বলেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের শুরু থেকে নতুন করে চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরছে। তার একটি অংশ বাংলাদেশেও আসছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন