সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

গরিবের চাল যাচ্ছে ধনীর ঘরে

রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

গরিবের চাল যাচ্ছে ধনীর ঘরে

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকায় ব্যাপক অসংগতি পাওয়া গেছে। কার্ডধারীদের মধ্যে অনেকে ধনী বা সচ্ছল পরিবারের। আবার কিছু ক্ষেত্রে কার্ড যার নামে, তারা নিজেই তা জানেন না। পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া নামে কার্ড বানিয়ে চাল নয়ছয় করা হচ্ছে। অন্যদিকে, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে অর্থ নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই এ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৩ হাজার ১৫৫ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি। দুবছরের জন্য এ কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা প্রতিমাসে বিনা মূল্যে পাবেন ৩০ কেজি করে চাল। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের চাল বিতরণ করা হয়েছে।
তবে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির এ তালিকা হাতে নিয়ে  এ প্রতিবেদক সম্প্রতি তিন দিন সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়েছেন। এতে উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়ন ও কালুপাড়া ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, যারা পাওয়ার যোগ্য তারা কেউই চাল পাননি। যারা পাচ্ছেন, তাদের পাওয়ার কথা নয়।
উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ী হাজিপাড়া গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী খালেদা আক্তারের নাম ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। সরেজমিন দেখা যায়, সম্পদ ও নগদ অর্থের দিক দিয়ে ওই গ্রামের সর্বোচ্চ ধনী তারাই। তাদের রয়েছে বিশাল রাজকীয় দালান-বাড়ি ও মোটরসাইকেল। খালেদা ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘটনায় অবাক এলাকার মানুষও। তার স্বামী আজিজুল হক বলেন, ‘আমাদের আবাদি জমি আছে ৫-৬ বিঘা। আমার স্ত্রী একজনের সাহায্য নিয়ে কার্ডটি করেছেন।’ তবে তার স্ত্রীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
কাঁচাবাড়ি শাহপাড়া গ্রামের কার্ডধারী আয়োবি খাতুনের ব্যাপারে জানা গেছে, তার স্বামী হাবিবুর রহমান একজন আম ব্যবসায়ী। তার ১০ বিঘার ওপরে আবাদি জমি রয়েছে। বাবার ভাগ পাবেন আরও ৭ বিঘা আবাদি জমির। বাড়ি দালানের, আছে মোটরসাইকেলও। কার্ড পাওয়ার বিষয়ে তারা মুখ খুলতে রাজি হননি। কাঁচাবাড়ি মৌলভীপাড়া গ্রামের রাহাদ হোসেনের বাড়ি আলিশান। আছে মোটরসাইকেল এবং আবাদি জমি। তার স্ত্রী হাসি আক্তার ভিডব্লিউবির কার্ডধারী। তবে রাহাদ বলেন, ‘আমার বাবা-মা গরিব। মায়ের বয়স বেশি হওয়ায় আমার স্ত্রীর নামে কার্ডটি করে নিয়েছি।’
কালুপাড়া ইউনিয়নে দেখা গেল, ভিডব্লিউবির তালিকার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কার্ডধারীর নাম, অভিভাবক হিসেবে বাবা অথবা স্বামীর নামের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গেছে, তাতে আবার গ্রামের মিল নেই।
কালুপাড়ার মাঝিপাড়া গ্রামের বরিতা রানী দাস নামটি ভিডব্লিউবির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। অভিভাবক হিসেবে নাম রয়েছে ফ্যালানু দাস। তবে এলাকায় ফ্যালানু দাস নামের একজন ছিলেন, তিনি মারা গেছেন বহু বছর আগে। ফ্যালানু দাসের স্ত্রী শেফালী রানী দাবি করেন, এটা (বরিতা রানী দাস) তার আরেক নাম। বিধবা ভাতার কার্ড থাকায় চেয়ারম্যান বরিতা রানী দাস নাম দিয়ে কার্ডটি করে দিয়েছেন।
উত্তরপাড়া গ্রামের শিমু আক্তার নামটি ভিডব্লিউবির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। অভিভাবক হিসেবে নাম রয়েছে মোক্তার। ওই নামে জুলাই ও আগস্ট মাসের ৬০ কেজি চালও উত্তোলন করা হয়েছে। তবে সরেজমিন ওই গ্রামে শিমু আক্তার নামের কাউকে পাওয়া যায়নি।
কালুপাড়ার সরকারপাড়া গ্রামের সচ্ছল আব্দুর রহিমের মেয়ে রোকসানা খাতুনের নামে করা হয়েছে কার্ড। ওই নামে দুই মাসের চালও তোলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকাশ থেকে পড়েন রোকসানা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আপনি এসব কী বলছেন! আমার অনেক আগে বিয়ে হয়েছে গাইবান্ধায় জেলায়। আমার নামে এখানে কার্ড হবে কেন? হলেও সেই কার্ড গেছে কোথায়?’
কালুপাড়া ইউনিয়নে অনুসন্ধানে আরও ৫০-৫২ জনের নাম জানা গেছে। যাদের নাম তালিকায় আছে। কিন্তু তারা চাল পাচ্ছেন না। চালগুলো নয়ছয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু লোহানীপাড়া ও কালুপাড়া ইউনিয়নেই নয় উপজেলার আরও ৮ ইউনিয়নেরও প্রায় একই অবস্থা। অভিযোগ রয়েছে, ওই কর্মসূচিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা ৮-১০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এ কারণে অসচ্ছল পরিবারগুলো বঞ্চিত হয়েছে।
কালুপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল হক মানিক বলেন, ‘কার্ড বিতরণ করেছেন মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা। একজনের কার্ড অন্যজনের কাছে গিয়েছিল, সেটি পরে দেওয়া হয়েছে।’
লোহানীপাড়া ইউনিয়নের প্রশাসক ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়ার্ড কমিটির তালিকাটি আমি উপজেলায় পাঠিয়েছি। যদি কোনো সচ্ছল নারীর নাম ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে আসে, তা এখনো উপজেলা প্রশাসন বাতিল করতে পারবে।’
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘বেশির ভাগ সচ্ছল নারী ভিডব্লিউবির আওতায় এসেছে, এটা সত্য। কার্ড বিতরণকালে বিষয়টি আমার চোখে ধরা পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘বেশকিছু লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগ তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনায় বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি, তা তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!