সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় ঈদুল আজহা উপলক্ষে মাত্র সাত দিনের জন্য অনুমোদন পাওয়া দুটি অস্থায়ী পশুর হাট পাঁচ মাস পেরিয়েও অবাধে চলছে। সরকারিভাবে লিজভুক্ত হাটের ইজারাদার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি মহল প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে হাটগুলো চালাচ্ছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এবং বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২১ মে ২০২৫ তারিখে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঈদুল আজহা উপলক্ষে দরবস্ত মৌজার ৫০১নং দাগের আংশিক ভূমি ও চিকনাগুল বাজারকে এক সপ্তাহের জন্য অস্থায়ী পশুর হাট হিসেবে ইজারা প্রদানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তির স্মারক নম্বর ছিল ০৫.৪৬.৯১৫৩.০০০.৩২.০০১.১৯.৫২৩। শর্ত অনুযায়ী ১ জুন থেকে ৭ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ রাখা হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দরবস্ত হাটের ইজারা নেন খরিলহাট মাদ্রাসার মহতামিম মাওলানা আবু হানিফ এবং চিকনাগুল বাজারের ইজারা নেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইকবাল হোসেন। তার অনুপস্থিতিতে বাজার পরিচালনা করছেন চিকনাগুল ইউনিয়নের কহাইগড় ১ম খ- গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে জহির উদ্দিন।
কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট ইজারাদার ও কিছু প্রভাবশালী মহল প্রতিদিন এই দুটি হাট বসিয়ে প্রতিদিন অবৈধ রশিদের মাধ্যমে লাখ টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, এই অবৈধ হাটগুলোতে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা গরু ও মহিষের বড় কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। অবৈধ রশিদের মাধ্যমে এসব পশুকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বৈধতার ছাপ দেওয়া হচ্ছে। ফলে বৈধ আর চোরাই পশুর মধ্যে পার্থক্য করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে স্থানীয় পশু কারবারিরা।
গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান, মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এসব বাজারে ভারতীয় পশু সহজেই বিক্রি করা যায়, তাই ব্যবসায়ীরা এখানে আসছেন। তবে ইজারা না থাকায় বাজারগুলো বৈধ নয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
দরবস্ত বাজারের ইজারাদার আবু হানিফের দাবি, এক সপ্তাহের ইজারা শেষ হওয়ার পর তাকে পুনরায় এক বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং তার কাছে সব কাগজপত্র আছে। অন্যদিকে চিকনাগুল বাজার পরিচালনাকারী জহির উদ্দিন বলেন, কয়েকজন মিলে কোরবানির ঈদের সময় ইজারা নিয়েছিলেন এবং এখনো বাজার চলছে, প্রশাসনও এ বিষয়ে অবগত।
এ বিষয়ে দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার বলেন, ইজারাদাররা নিয়মিতভাবে টাকা তুলছেন। যদি বাজারটি কেবল এক সপ্তাহের জন্য অনুমোদিত হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে বৈধতা না পেয়ে থাকে, তাহলে প্রশাসন থেকে তাকে কিছু জানানো হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা জানান, অস্থায়ী পশুর হাট ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেবল সাত দিনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে এখন যদি হাট চলমান থাকে, তবে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রশাসন দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
স্থানীয়দ ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলের দাবি, অবৈধভাবে পরিচালিত এ দুটি হাট অবিলম্বে বন্ধ করে সরকারি নীতিমালার আওতায় আনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যারা অবৈধভাবে রাজস্ব আদায় করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা রাখা জরুরি দরকার।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন