ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার পর ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম বহিস্কার করা হয়েছে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মিজানুর রহমানকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও রিকশাচালক খোকন মিয়া (৪০) হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামী। সে একই ইউনিয়নের করমা গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।
গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১০ টার দিকে উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের করমা গ্রামে রিকশাচালক খেকন মিয়াকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত খোকন মিয়া ওই গ্রামের মৃত কছুম উদ্দিনের ছেলে।
এই ঘটনার গত শনিবার নিহত খোকন মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলামসহ ১৩ জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামী করে মামলা করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, করমা গ্রামের কছিম উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন নামের দুই ভাই ছিলেন। ৬-৭ বছর আগে গিয়াস উদ্দিনের মৃত্যুর পর জমি নিয়ে কছিম উদ্দিনের সঙ্গে গিয়াস উদ্দিনের ছেলেদের বিরোধ শুরু হয়। বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় থানায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলাও হয়। স্থানীয়ভাবে দুই পরিবারের বিরোধ মেটাতে কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলে তা মানেননি কেউ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিকশা রেখে ঘর থেকে বের হন খোকন মিয়া। এ সময় গিয়াস উদ্দিনের ছেলে স্থানীয় মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই এবং পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে দুই হাত ও দুই পা ভেঙে দেন। এ সময় তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ও মাথায় আঘাত করা হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত একটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
পরে পুলিশ উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক খোকনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত খোকন মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন বলেন, জমি নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে আমার বাবাকে বাড়ি খেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে নজরুল ও তার ভাইয়েরা। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, আমরা রাত দেড়টার দিকে যখন খোকন মিয়াকে উদ্ধার করি, তখনো তিনি জীবিত ছিল, কথা বলেছেন, পানি খেয়েছিলেন। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে। লোকটির দুই হাত ও দুই পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। মাথাতেও আঘাত ছিল।
ওসি আরও বলেন, হত্যায় ছাত্রদল নেতা নজরুল, তাঁর ভাইয়েরা এবং ভাইয়ের স্ত্রীরা জড়িত। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে জ্যোৎস্না আক্তার ও সোহাগ নামে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। মামলার আটক দুই আসামীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে গত শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে, বিচারক রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ঘটনার পর থেকে ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে। যে কারণে নজরুল ইসলামের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন তালুকদার বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. নজরুল ইসলামকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন