- খাল খনন না হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে কৃষি ও মাছ চাষ বিপন্ন
- সেচ ব্যয় বেড়ে ধান চাষে অনাগ্রহী কৃষক, অনাবাদি জমি বাড়ছে
- খাল খননের দাবি জানিয়ে বহুবার আবেদন করেও সুফল মেলেনি
দীর্ঘদিন খনন না হওয়া, দখল-দূষণ ও নাব্যতা সংকটে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী টরকী-বাশাইল খাল আজ মৃতপ্রায়। একসময় খরস্রোতা এ খাল এখন ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার অস্তিত্ব। এর প্রভাব পড়ছে কৃষিজমি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় জনজীবনে। বহু বছর ধরে ভুক্তভোগীরা জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিলেও খাল খননের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
টরকী-বাশাইল খালটি বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টরকী বন্দরের পালরদী নদীর স-মিল এলাকা থেকে শুরু হয়ে ধানডোবা, রাজাপুর, সাদ্দামবাজার, মোক্তারবাজার, চেঙ্গুটিয়া হয়ে আগৈলঝাড়ার বাশাইল বাজার পর্যন্ত গেছে। হাজার হাজার কৃষক এই খালের পানির ওপর নির্ভর করে বোরো আবাদ করতেন। কিন্তু বর্তমানে খালের মোহনা উঁচু হয়ে যাওয়ায় পালরদী নদী থেকে আর পানি প্রবেশ করে না।
ক্লাইমেট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের আগৈলঝাড়া শাখার পরিবেশকর্মী সৈয়দ মাজারুল ইসলাম রুবেল জানান, খাল খনন না হওয়া ছাড়াও বাঁধ, অপরিকল্পিত ব্রিজ, দখল ও আবর্জনা ফেলার কারণে খালটির নাব্যতা বিলীন হয়ে গেছে। ‘একসময় এ খাল ছিল প্রধান নৌপথ। এখন শীতকালে পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ফলে ২০ হাজার হেক্টর জমির সেচ ব্যয় বেড়ে গেছে, কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে’, বললেন তিনি।
প্রতি ২০ শতক জমি চাষে পানি সেচ বাবদ কৃষকদের তিন শতক জমির সমপরিমাণ ধান দিতে হচ্ছে সেচ ব্লকের ম্যানেজারদের। উৎপাদন খরচ ধানের বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক ধান চাষ ছেড়ে পান চাষ ও মাছের ঘেরের দিকে ঝুঁকছেন।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ছাদের আলী সরদার বলেন, ‘আমাদের শৈশবে এই খালের স্রোত এত বেশি ছিল যে সাঁতরে পার হওয়া কঠিন হতো। দেশীয় মাছও প্রচুর পাওয়া যেত। আজ খাল মৃতপ্রায়, মাছ হারিয়ে গেছে, কৃষকরা চাষে অনাগ্রহী।’
খালের নাব্যতা কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে খাল শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বর্ষায় কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই আশপাশের এলাকা পানিতে টইটম্বুর হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় পানবরজ ও মাছের ঘের। খালে পানি জমে থাকায় জন্ম নিচ্ছে ম্যালেরিয়া, এডিশ মশা ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ জীবাণু, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
ভুক্তভোগীরা জানান, খাল খননের দাবিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষি অফিস ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে বারবার আবেদন করা হলেও আজও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। খাল খননের প্রকল্প জমা পড়লেও কবে তা বাস্তবায়ন হবে, কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারছে না।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণই এখন জরুরি। খাল ও নদী খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনলে কৃষকরা সেচ ব্যয় কমিয়ে বেশি ফসল ফলাতে পারবেন। এতে একদিকে জলাবদ্ধতা দূর হবে, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে খালের জমাটবদ্ধ পানি ব্যবহার করে আবাদ করা যাবে।’
তিনি আরও জানান, বরিশালের জনগুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু খাল খননের বিষয়ে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন