প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়া ও টানা বর্ষণের কারণে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিপর্যয়ের মুখে। বিক্রি না হওয়া পণ্য আর উৎপাদন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা স্থানীয় কুমার (পাল) সম্প্রদায়ের মানুষজন।
উত্তরবঙ্গের মধ্যে বগুড়া জেলা মৃৎশিল্পের জন্য সুপরিচিত। দুপচাঁচিয়া উপজেলার পৌর এলাকার পালপাড়া ও পালবাড়ি মহল্লায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শিল্পের চর্চা হয়ে আসছে। এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবারেরই হাঁড়ি-পাতিল, কলস, থালা, ফুলের টব, খেলনা, কুয়া রিং-পাটসহ নানান মাটির পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ চলে।
স্থানীয় মৃৎশিল্প কারিগর খগেন চন্দ্র পাল জানান, পণ্য তৈরির জন্য মাটি ও খড় কিনতে হয়, যার জন্য এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে রোদ না থাকায় পণ্য শুকানো ও পোড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে উৎপাদনে সময় বাড়ছে, খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় উৎসব ও মেলায় কিছুটা চাহিদা থাকলেও প্রকৃতির প্রতিকূলতার কারণে ঠিকভাবে উৎপাদন ও বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
তরুণ পাল, সহদেব পালসহ স্থানীয় অনেক কারিগর জানান, বর্ষায় পণ্য নিয়ে হাটবাজারে গেলেও অর্ধেকের বেশি বিক্রি না হওয়ায় আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। এতে ঋণ পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে, আর পুরো পরিবার নিয়ে চলছে অস্থির সময়।
দীপক পাল বলেন, ‘আধুনিক যুগে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী মাটির পণ্যের কদর কমে গেছে। আগে এই পণ্য ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যগত উপকার হতো, কিন্তু এখন প্লাস্টিকের কারণে নানা রোগবালাই বাড়ছে। তবুও মানুষ মাটির পণ্য ব্যবহার করছে না।’
স্থানীয় বিশিষ্টজনরা মনে করেন, এই প্রাচীন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এখনই সরকারি উদ্যোগ জরুরি। ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ, কারিগরদের জন্য ভাতা এবং বাজারজাতকরণে সহায়তা দিলে কুমার সম্প্রদায় বাঁচবে এবং এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন