ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী থানাধীন বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ টেন্ডার ছাড়াই কাটার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তহশিলদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
তবে ভূমি অফিসের সরকারি গাছগুলো উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশাদুল হকের নির্দেশেই কাটা হয়েছে বলে জানান তহশিলদার। গত শনিবার ঠাকুরগাঁও সদরের এসিল্যাড মো. আশাদুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে শোকজ করা হয়।
কারণ দর্শানো চিঠিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে অবস্থিত ৮টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কাটেন। কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে গাছ কাটার অপরাধে কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পাশেই আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে মর্মে মাঠে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ১০টি গাছ কাটার অনুমতি ও মূল্য নির্ধারণের জন্য লিখিত আবেদন করেন তহশিলদার আবুল কালাম আজাদ। তবে যখন আবেদন করা হয় তখন এসিল্যান্ডের দায়িত্বে ছিলেন সদর ইউএনও মো. খাইরুল ইসলাম। তখন তিনি গাছগুলো কাটার অনুমতি দেননি।
পরবর্তীতে গত মাসের ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন এসিল্যান্ডের দায়িত্বে আসেন মো. আশাদুল হক। পরে এক বৈঠকে তহশিলদার আবারও গাছ কাটার বিষয়টি উপস্থাপন করলে এসিল্যান্ড ওই তহশিলদারকে গাছগুলো কাটার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার তহশিলদার গাছগুলো কাটলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়। এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। স্থানীয়রা সরাসরি এসিল্যান্ডকে দায়ী করলে তিনি তড়িঘড়ি করে দায় এড়িয়ে তহশিলদার আবুল কালাম আজাদকে শোকজ করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবুল কালাম আজাদ জানায়, স্যারের (এসিল্যান্ড) নির্দেশেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। অথচ আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে শোকজ করা হলো। স্যার এখন অস্বীকার করছেন। নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে ওই গাছগুলো কাটার প্রয়োজন ছিল। সেজন্য আমি স্যারের বরাবরে লিখিরভাবে আবেদনও করেছি। গাছের বিষয়টি ইউএনও স্যার, উপজেলা প্রকৌশলীও জানেন। ইউএনও স্যারও বলেছিলেন যখন নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে তখন গাছগুলো কেটে এক পাশে রেখে দিয়েন।
তিনি আরও বলেন, স্যার (এসিল্যান্ড) নিজেই এসেছিলেন অফিসে। নিজেই কথা বলে গেছেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। এদিকে গাছের জন্য কাজ আটকে আছে। ঠিকাদার চাপ দিচ্ছে গাছ কাটার জন্য। কিন্তু এসিল্যান্ড ও ইউএনও স্যার দুজনেই জানে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, টেন্ডার ছাড়াই একজন তহশিলদার কখনো গাছ কাটতে পারে না। তদন্ত করলেই দেখা যাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া তহশিলদারের একার পক্ষে সরকারি গাছ কাটার সাহস পাওয়ার কথা নয়। দোষ করে কর্মকর্তারা আর ধরা খায় কর্মচারীরা। পরে কর্মকর্তারা নিজেরা বাঁচতে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়। অথচ তারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থাকেন। কিন্তু কাঁধে দায় নিতে চায় না।
তারা আরও বলেন, যে গাছগুলো কর্তন করা হয়েছে তার বাজার মূল্য হবে এক লক্ষাধিক টাকা। সরকারি সম্পদ এভাবে টেন্ডার ছাড়াই ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তবে এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশাদুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে ফোন বন্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল বলেন, নির্দেশ দিলেই কি তিনি গাছ কাটবেন? আমাকে অবগত করা বা এসিল্যান্ডকে অবগত করা এটা এতো আইনের ভাষা হতে পারে না। আমি তো আইনের বাইরে কোনো কাজ করি না।
তিনি আরও বলেন, বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে একটা নতুন ভবন নির্মাণ হবে সে হিসেবে গাছ আগে কাটার প্রয়োজন হলে টেন্ডার হবে। তবে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বুলবুল আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গাছ কাটা ও তহশিলদারকে শোকজ করার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন