শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম

সবজির দামে পুড়ছে ক্রেতা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম

সবজির দামে পুড়ছে ক্রেতা

রাজধানীর উত্তরার বিডিআর বাজারে গতকাল শুক্রবার সকালে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী নাহিদ ইসলাম। সবজি, মাছ, মুরগিসহ বিভিন্ন দোকান ঘুরে কিনতে পারছিলেন না কিছু। অবশেষে দরদাম করে কিনলেন কয়েক পদের সবজি, দুটো রুই মাছ এবং তিনটি ব্রয়লার মুরগি। কেনাকাটার একপর্যায়ে কথা হয় তার সঙ্গে। মুখ বেজার করে তিনি বলেন, ‘সব কিছুর এত দাম! দাম শুনে পকেটের কথা ভাবি। কী কিনব আর কী কিনব না, ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় পার করেছি। কিছু সবজি, দুটো রুই মাছ আর তিনটা মুরগি কিনতে খরচ হয়েছে আড়াই হাজার টাকার মতো।’ একই অবস্থা বাজারে আসা অন্যান্য ক্রেতাদের। সবার ভাষ্য, গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বাজারের প্রায় সব কিছুরই দাম বেড়েছে। তারা জানান, অতিরিক্ত দামে স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোও অনেক ক্ষেত্রে বিলাসিতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। 

বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে সব সবজির দামই কেজিপ্রতি ১০০ টাকার ওপরে। এ ছাড়া নতুন করে দাম বাড়ছে সবজির। তবে হুট করেই বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কমেছে। অপরদিকে বেড়েছে মাছ-মুরগির দামও। সরেজমিনে রাজধানীর নবাবগঞ্জ, আজিমপুর, নিউমার্কেট, পলাশী, হাতীরপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহের চেয়ে নিত্যপণ্যে শাক-সবজিসহ মাছ-মুরগির দাম বৃদ্ধির চিত্র।

গতকাল শুক্রবার নবাবগঞ্জ, নিউমার্কেট, পলাশী ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি সাদা গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৬০-১৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৩০-১৪০ টাকা, শিম ২০০-২৬০ টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০-১২০ টাকা, পটোল (হাইব্রিড) ৮০ টাকা, দেশি পটোল ১৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি  ৮০ টাকা, মুলা ৬০-৮০ টাকা, কচুরমুখি ৮০-১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২২০-২৪০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ৩০০ টাকা, শসা ৫০-৭০ টাকা, পেঁপে ২৫-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০- ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০-১২০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০-৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০-৫০ টাকা। এ ছাড়া, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৪০ টাকা করে।

এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহে প্রতি কেজি বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, চায়না গাজর, শিম, দেশি শসা, ঢ্যাঁড়শ, দেশি পটোলের দাম বেড়েছে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন লম্বা বেগুন ৫০-৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো বেগুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা, টমেটো ১২০-১৩০ টাকা, দেশি গাজর ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৩০ টাকা এবং কচুর লতি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। প্রতি পিস লাউ ৫০-৭০ টাকা ও চালকুমড়া বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

গতকাল সকালে নবাবগঞ্জ বাজারে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী মুজাহিদ আনিস। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাজারে সব জিনিসের দামই বেশি। শীতের আগে সবজির দাম কম থাকার সুযোগ থাকলেও তা কমেনি। সরবরাহে কমতি নেই, তবুও নানা অজুহাতে দাম বাড়তি। তিনি দুঃখ নিয়ে জানান, আগে এক হাজার টাকার বাজার করলে এক সপ্তাহ যেত। এখন এক-দেড় হাজারে বাজার হয় না। সপ্তাহ পার দূরের কথা, ৪ জনের সংসারে ঠিকমতো সব জিনিস কিনতেও পারছি না। বেগুন, কুমড়া আর লাউ কিনেই ৪০০ টাকা শেষ। মাছ, তেল, শুকনা বাজার তো সবই বাকি। কীভাবে চলবে আমাদের মতো মধ্যবিত্তের সংসার! 

বিশ্ববিদ্যলয় শিক্ষার্থী তন্ময় কুমার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। যেকোনো অজুহাত দিয়েই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়। দেখার কেউ নেই। দুই সপ্তাহ আগে সবজির দাম কম থাকলেও আবার বেড়েছে লাগামহীনভাবে। আমাদের মতো শিক্ষার্থী যারা মেসে থেকে পড়াশোনা করি, তদের ভরসা এখন ডাল-ভর্তা। তবে দাম বাড়ায় ডালের চেহারা ফ্যাকাসে হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যথাযথ মনিটরিং করা হলে সেটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, তবে কখনো তা চলমান থাকে না। বিপদে আছি আমরা সাধারণ মানুষ।

এদিকে সবজির দাম বাড়ার পেছনে বৃষ্টি ও ঋতুর পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন বিক্রেতারা। তাদের দাবি, ‘অসময়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে সবজির দাম বেড়েছে। এ ছাড়া একটা সিজন থেকে আরেকটা সিজন আসছে। এ রকম সিজন পরিবর্তন হলে চলে যাওয়া সিজনের সবজির দাম বাড়তি থাকে।’

বিক্রেতারা আরও জানান, গ্রীষ্ম মৌসুমের এই সময়ে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কিছুটা কম থাকে। তবে এক-দেড় মাসের মধ্যে শীতের সবজি বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন দাম কমে আসবে।

এ ছাড়া সবজির দাম বাড়ার পেছনে বারবার হাতবদলকেও দায়ী করেন বিক্রেতারা। তারা জানান, স্থানীয় পর্যায় থেকে কয়েক হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসা পর্যন্ত কয়েকবার দাম বদলায়। উদাহরণ হিসেবে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা জামান মিয়া বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি সবজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ করেন। এ ছাড়া প্রতি পিস লম্বা লাউয়ে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত লাভ করে থাকেন। খুচরা পর্যায়ে বাজার ও জায়গাভেদে এর প্রভাব দ্বিগুণ থেকে চার গুণ। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সঙ্গে যদি সরাসরি রাজধানীর বিক্রেতাদের যোগাযোগ থাকত, তাহলে হাতবদল কমে পণ্যের দামও অনেক কমে যেত। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হতো।

গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের সঙ্গে কমেছে আলু-পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮৫ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, লাল আলু ২০-২৫ টাকা, সাদা আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০-৩৫ টাকা।

এ ছাড়া বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। সপ্তাহ দুয়েক আগে কিছুটা কম থাকলেও গতকাল আবার বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। গতকালকের বাজারে ব্রয়লার ১৮০-১৯০, সোনালি ৩০০-৩২০, পাকিস্তানি কক ২৮০-৩০০, দেশি মুরগি ৫৮০-৬০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এসব মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১৩০-১৪০ টাকা এবং সাদা ডিম ১২০-১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৯০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। 

সবজি ও মুরগির পাশাপাশি বেড়েছে মাছের দামও। আকার ও ওজন অনুযায়ী রুই মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০-৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৫০, পাঙাশ ২৫০-৪০০, কালোবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, মিনি মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা ১০০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগের বাজারদরের তুলনায় চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন মাছের দাম বেড়েছে অন্তত ৩০ থেকে ৫০ টাকা।  

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জীবনযাত্রার ব্যয়সংক্রান্ত বাৎসরিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যপণ্যের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের বেশির ভাগ মানুষ কষ্টে আছেন। অনেকের জমানো সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে। এই প্রবণতার প্রতিকার জরুরি। অন্যথায় দেশের স্থিতিশীলতা ব্যাহত হতে পারে।

ক্যাব সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, যৌক্তিকের চেয়ে দাম বেশি রাখা হয়। যেখানে অনিয়ম হবে, সেখানে আমরা ধরিয়ে দেব। সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করব।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!